মাহমুদ হাশিম : করোনার বিস্তার ঠেকাতে গত ২৫ মার্চ থেকে গণছুটি ঘোষণা করে সরকার। কয়েক দফা বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয় ছুটি। সে হিসেবে ২৬ এপ্রিল গণছুটির এক মাস পেরিয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে দেশে করোনায় মারা গেছেন ১৪৫ জন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১টিতেই শনাক্ত হয়েছে করোনা রোগী। তারপরও এ কথা বলা যায় গণছুটি আর আক্রান্ত এলাকা বিচ্ছিন্ন করার কারণে দেশে করোনার বিস্তার কিছুটা হলেও ঠেকানো গেছে।
গণছুটিতে অফিস-আদালত, কলকারাখানা বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতি অনিবার্যভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। অর্থনীতি এবং মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে সরকার গণছুটি শেষ হবার আগেই ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সীমিত আকারে খোলার নির্দেশনা দিয়েছে ২৬ এপ্রিল থেকে। স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা মেনে সীমিত আকারে পোশাক কারখানা খোলা রাখা যাবে বলেও সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় সচল হয়েছে ৩১ দিন পর। কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। রাজধানীসহ দেশের পোশাক কারখানাগুলোও চালু হয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে।
করোনা দুর্যোগের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবাসহ সরকারের জরুরি বিভাগগুলো চালু ছিল। সঙ্গত কারণে ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চালু হয়েছে সীমিত আকারে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনার বিষয়ে অনেকটাই সচেতন এবং তাদের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করেও অফিস করা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- ছুটি শেষ হবার আগেই ফের পোশাক কারখানা খোলা নিয়ে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পোশাক শ্রমিকদের অশেষ কষ্ট স্বীকার করে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা শুধু কারখানার আশপাশে থাকা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলছেন। কিন্তু এটি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগেও দেখা গেছে চাকরি রক্ষা করতে দূরদূরান্ত থেকে শ্রমিকরা ভয়ানক কষ্ট স্বীকার করে- এমনকি অনেকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে কাজে যোগ দিতে এসেছিলেন- যদিও পরে তাদের ফিরে যেতে হয়।
শুধু কষ্টেই শেষ নয়। সঙ্গত কারণে পোশাক শ্রমিকদের পক্ষে যাতায়াত কিংবা কর্মক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব নাও হতে পারে। আর কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টা কতখানি গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন সে প্রশ্নও থেকে যায়।
এ কথা ঠিক যে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত এই পোশাক শিল্প। করোনা দুর্যোগে এরই মধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে। লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনির্দিষ্টকাল শুধু পোশাক শিল্প নয়, কোনো কিছুই হয়তো বন্ধ রাখা যাবে না। কিন্তু গণছুটি শেষ হবার আগেই পোশাক কারখানা ফের খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি বলে মনে করেন অনেক। এতে করোনা বিস্তারের ঝুঁকি রয়েই গেলো।
সরকারের পক্ষ থেকে- এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, এপ্রিল মাসটি দেশে করোনা বিস্তারের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। হয়েছেও তাই। কিছু কমবেশি হলেও এ মাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে। বিশেষ করে যতই পরীক্ষা বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত।
শুধু যে সাধারণ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তা নয়। করোনার সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করা চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে। এ পর্যন্ত তিন শোর বেশি চিকিৎসক, দুই শো’র বেশি নার্স আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। এরই মধ্যে একজন চিকিৎসক ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী প্রাণ দিয়েছেন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আড়াই শো’র বেশি সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ দেশ এখনো পূর্ণমাত্রায় করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিৎসক, খ্যাতিমান অধ্যাপক এ বি এম আবুদল্লাহ বলেছেন, এপ্রিল মাসের পর দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে এ মাসটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য তিনি ছুটি বাড়ানো ও লকডাউনে যাবারও পরামর্শ দেন। সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, ৫ মে ছুটি শেষ হওয়ার আগেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খোলায় হয়তো বড় ঝুঁকি নেই। কিন্তু ঝুঁকির এপ্রিলে গার্মেন্টস খুলে দেয়া আত্মঘাতি হতে পারে। (সি আর আই )
Leave a Reply