বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল দশ হাজার। একই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়া প্রদেশ পুরোপুরি তালাবন্দি করে ফেলার কথা ঘোষণা করেছেন সেখানকার গভর্নর। আগামী দু’তিন সপ্তাহে চিকিৎসা সরঞ্জামে টান পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে নিউ ইয়র্কে। সেখানে জরুরি-পরিষেবার সঙ্গে জড়িত কর্মীদের ছাড়া বাকি সব পেশার মানুষকে বাড়িতে থাকতে বলছেন গভর্নর। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’-এর প্রধান ডেভিড বেসলিও আক্রান্ত হয়েছেন কোভিড-১৯-এ। গত কাল এ খবর জানার পরে তিনি যাঁদের যাঁদের কাছাকাছি গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে, তাঁদের সকলকে চিহ্নিত করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন বিদেশ দফতর দুনিয়া জুড়ে আমেরিকার সব দূতাবাস এবং কনসুলেটে ভিসা পরিষেবা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। আজ থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। মার্কিন নাগরিকদের বিদেশ সফরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। আগামিকাল থেকে কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। আমেরিকা-প্রবাসী প্রভাবশালী ভারতীয় চিকিৎসকদল ফেডারেল ও স্টেট গভর্নমেন্টকে অনুরোধ করছেন, গোটা মহাদেশেই লকডাউন করা হোক। তাঁরা চাইছেন, নিজেই বাড়িতে আলাদা থাকুন নাগরিকেরা। আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা এখনও ২১৮। আক্রান্ত ১৫,৫০০ জন।
করোনা-বিধ্বস্ত ইটালিতে আরও পাঁচ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ফের মৃত্যুর নয়া রেকর্ড— ৬২৭। করোনা প্রকোপের মধ্যে এই প্রথম এক দিনে এত মৃত্যু হল। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২৬২৯ স্বাস্থ্যকর্মী। যাঁরা সরাসরি করোনা-রোগীদের জন্য কাজ করছেন, তাঁদের নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। এমনিতেই ইটালিতে মৃতের সংখ্যা টেক্কা দিয়েছে চিনকে। এখন তাই দেশের প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টে বলেছেন, কোয়রান্টিন করে রাখার নির্ধারিত মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
ইটালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোবার্তো স্পেরানজ়া বলেছেন, ‘‘ইতিহাসে যত কঠিন মুহূর্তের সাক্ষী আমরা, তার মধ্যে এটা সব চেয়ে ভয়াল। একটা নতুন ভয়ঙ্কর শত্রু আমাদের জীবনে ঢুকে সব ওলোটপালট করে দিয়েছে। সামনে আরও কঠিন সময়। তবে আমার বিশ্বাস, সবাই মিলে এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠব।’’ ইটালির উত্তর অংশ থেকে করোনা-আক্রান্ত রোগীদের এখন দেশের অন্যত্র পাঠাতে হচ্ছে। কারণ উত্তরের হাসপাতালগুলির সব আইসিইউ ভর্তি হয়ে গিয়েছে। লমবার্ডি থেকে অন্তত ৫০ জন রোগীকে দক্ষিণের দিকে পাঠানো হয়েছে।
ইটালির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ব্রিটেন যদি এখনই লকডাউন ঘোষণা না করে তা হলে সে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাও ভেঙে পড়বে। ব্রিটেনেও সুনামির মতো বাড়ছে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা। ব্রিটেনের সরকারি উপদেষ্টারাও বলছেন, সে দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সংক্রান্ত সব নির্দেশ এ বছরের অনেকটা সময় চালু রাখতে হবে। আপাতত তিন মাস সময় চেয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। শুক্রবার তিনি বলেন, সামজিক মেলামেশায় রাশ টেনে এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ অনেকটা কমানো সম্ভব হবে। শুক্রবার পর্যন্ত ব্রিটেনে করোনা-মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৪। এত দিন গড়িমসি চললেও মহামারি রুখতে শুক্রবার রাত থেকে শেষ পর্যন্ত পাব, রেস্তরাঁ, জিম বন্ধ করে দিচ্ছে বরিসের প্রশাসন। আগামী তিন মাসও এই সব জায়গায় নাগরিক যাতায়াতে কিছুটা রাশ টেনেই রাখতে চাইছেন জনসন।
ফ্রান্সে মৃত্যু ৪৫০ ছুঁয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ৭৮ জন। চিন, ইটালি এবং ইরানের পরে স্পেনেও মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। লকডাউন আর্জেন্টিনাতেও। পাকিস্তানে আজ করোনায় তৃতীয় মৃত্যু হয়েছে। সেখানে এখন ৪৫৩ জন কোভিড-১৯ পজ়িটিভ।
করোনা-আতঙ্কের মধ্যেই শুক্রবার অলিম্পিক টর্চ গিয়ে পৌঁছেছে জাপানের মিয়াগির হিগাশিমাতসুশিমায়। সেখানে জাপানি এয়ার সেল্ফ-ডিফেন্স ফোর্স গ্রিস থেকে আসা অলিম্পিক টর্চ নিয়ে প্রদর্শনী করেছে। আজ মাস্ক পরেই তা দেখতে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জানিয়েছেন তাঁদের দেশে স্কুলগুলিও ফের খুলে দেওয়া হবে। গত কাল সেখানে এক জন স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে নিষেধে রাশ আলগা করার ব্যাপারে সায় দিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি যে কোনও সময়ে পাল্টে যেতে পারে বলে সতর্কও করে রেখেছেন তিনি।
Leave a Reply