করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টিন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার শত শত পরিবার। বাড়িতে অবস্থান করায় কাজ করতে পারছেন না তারা। নিম্ন আয়ের এ সব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ। বুধবার রাত থেকে এসব পরিবারের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মোস্তফা কামাল জানান, সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্ব বাজার মনিটরিং করা হয়। করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ হয় এবং শতভাগ হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ নিত্যিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া অন্যসব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে ৫০ হাজার করে টাকা এবং ৫ মেট্রিক টন চাল পাঠান। উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ উপজেলার দুস্থ মানুষের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। চাল, ডাল, তেলসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য দুস্থদের বাড়িতে বাড়িতে পাঠানো হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধের দোকানের সামনে সাদা গোল বৃত্যের মধ্য থেকে কেনাকাটা করার জন্য মানুষকে সচেতন করেন। করোনা থেকে জনগনকে সচেতন করার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ এবং মার্কিং করেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সাতক্ষীরা শহরের বকচরা এলাকায় বাইপাস সড়ক সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি), সাতক্ষীরা সদর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনাকালে বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যায়। বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত স্যালো মেশিন এবং পাইপ জব্দ করা হয়েছে।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজাহার আলীর নেতৃত্বে একটি টিম সাতক্ষীরা শহর ও বড় বাজার এলাকায় টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান আকরামুল হক এবং ইন্দ্রজিৎ সাহার নেতৃত্বে একটি টিম সাতক্ষীরা শহর, আলিপুর থেকে বাদামতলা হয়ে ভোমরা পর্যন্ত টহল কার্যক্রম চলমান রেখেছেন।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নূরুল আমিনের নেতৃত্বে একটি টিম পুরাতন সাতক্ষীরা হতে ব্রহ্মরাজপুর বাজার পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলোতে লোক সমাগম পরিহার করে বিক্রয় করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুর্শিদা খাতুন নেতৃত্বে একটি টিম খুলনা রোড হতে পাটকেলঘাটা বাজার পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলোতে লোক সমাগম পরিহার করে বিক্রয় করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। চায়ের দোকানে অপ্রয়োজনীয় জমায়েত বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হয় এবং মুদি দোকানে একত্রে জমায়েত বন্ধ করতে বলা হয়।প্রয়োজন ব্যতীত বাইরে বের না হতেও অনুরোধ করা হয় মাইকের মাধ্যমে।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে মুসলিমার নেতৃত্বে একটি টিম সার্কিট হাউজ হতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলোতে লোক সমাগম পরিহার করে বিক্রয় করার নির্দেশনা প্রদান করে। এছাড়া চা এর দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনায় বুধহাটা ইউনিয়নের প্রত্যেকটি বাজার ব্লিচিং পাউডার দ্বারা স্প্রে করা হয় এবং এবং প্রতিটি ইউনিয়নে ভাইরাস প্রতিরোধে স্প্রের ধারা অব্যাহত আছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস হতে প্রাপ্ত ১২ সেট চচঊ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আশাশুনিতে প্রদান করা হয়েছে। বিদেশ ফেরতদের শতভাগ হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে বাড়িতে বাড়িতে লাল পতাকা টানানো হয়েছে। আশাশুনির বুধহাটা, চাপড়া ও গোয়ালডাংয়া বাজারে সহকারী কমিশনার (ভূমি), আশাশুনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ অভিযান কালে লোক সমাগম খুব কম দেখা যায় এবং বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল। সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জরিমানা হয়নি।
তালা উপজেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকানগুলোর সামনে সাদা দাগ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট দাগের মধ্যে দাঁড়িয়ে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করছেন। প্রয়োজন ছাড়া যাতে কেউ ঘরের বাহিরে বের হয়ে ঘোরাঘুরি না করেন সে জন্য তাদের সতর্ক করাসহ সচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়, মাইকিং অব্যাহত আছে। একইসাথে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ও ঔষধের দোকান ছাড়া বাকী অন্যান্য দোকানদের তাদের দোকান বন্ধ রাখার আহবান। এছাড়া সকল ধরনের সভা সমাবেশ, সেমিনার, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সকল প্রকার গণজমায়েত নিষিদ্ধ করার জন্য ঘোষণা দেন।
কলারোয়া উপজেলার কলারোয়া বাজারে জীবানুনাশক ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত জীবানুনাশক পানি ছিটানো হচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি), কলারোয়া বাজার, দমদম, সোনাবাড়িয়া, বুঝতলা ও গয়ড়া বাজারে ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান, মুদি দোকান ব্যতিত অন্যান্য দোকান বন্ধে পরিচালিত অভিযান পরিচালনা করে।
কালিগঞ্জ উপজেলায় জীবাণুনাষক দিয়ে পুরো উপজেলা ধুয়ে ফেলা শুরু করছি। সরকারি আদেশ অমান্য করায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
শ্যামনগর উপজেলায় বাজারগুলোতে প্রতিটি দোকানের সামনে সাদা দাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন মানুষ নিরাপদ দূরত্ব বজার রেখে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে। শতভাগ হোম কোয়ানেন্টিন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
দেবহাটা উপজেলায় বিদেশ ফেরত সকেলেই হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply