আজ (২ ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার)। দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এস মোস্তফা কামাল এর নিকট আদি যমুনা নদীর শ্যামনগর সদরের আদি যমুনা নদীর দু ধার উম্মুক্ত করার লক্ষ্যে অবৈধ্য স্থাপনা উচ্ছেদের দাবীতে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে জেলা প্রশাসক স্মারকলিপির দাবীর সাথে একমত পোষন করে বলেন, সাতক্ষীরার উপকুলীয় অঞ্চলের প্রধান নদী আদি যমুনা। ইছামতির মিষ্টি পানির প্রবাহ সুন্দরবনের মধ্যদিয়ে সাগরে যাওয়ার একমাত্র পথ আদি যমুনা নদী। সেকারণ আদি যমুনা নদীকে প্রবাহময় করতে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন তা করা হবে।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন আদি যমুনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ও প্রগতির প্রধান নির্বাহী অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, শ্যামনগরের সদরের চেয়ারম্যান ও বিশেষ পিপি এড. জহুরুল হায়দার বাবু, সুশীলনের সহকারী পরিচালক জি এম মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আব্দুল আল ফারুক প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শ্যামনগর সদর দিয়ে প্রবাহিত আদি যমুনা নদীর উপর দিয়ে চলে যাওয়া সকল সংযোগ সড়কে ব্রীজ নির্মান সম্পন হয়েছে। ইতোমধ্যে সোনারমোড়ে ব্রীজ নির্মান হয়েছে। এছাড়াও আদি যমুনার প্রধান বাধাঁ মাদার নদী ও যমুনা সংযোগ স্থলে(চিংড়ীখালী) স্লুইজগেট নির্মিত হয়েছে।
শ্যামনগর সদরের সাতক্ষীরা-মুন্সিগজ্ঞ সড়কের চন্ডিপুর এলাকা থেকে নকিপুর বাজারের দক্ষিনপাশ্বস্ত মহাশশ্মানের ধার পর্যন্ত যে ৪টি ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে, সে গুলোর নীচ দিয়ে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করতে হলে এ অংশের যমুনা নদীর খনন কাজ করা দরকার। কালিগজ্ঞের অংশের আদি যমুনা খননের মাধ্যমে ইছামতির যে প্রবাহ নাজিমগজ্ঞের পার্শ্ব হয়ে আসছে সে প্রবাহ শ্যামনগরের মহা-শশ্মœান পর্যন্ত প্রবাহিত হতে পারবে। এটা করা সম্ভব হলে শ্যামনগর সদরসহ সকল ইউনিয়নের কৃষি জমি ও বসতভিটা জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে, তেমনি শ্যামনগর সদরের নকিপুর বাজার, উপজেলা পরিষদ, হাসপাতালের বর্জসহ সকল ধরনের বর্জ নদীতে চলে যাওয়ায় এলাকা দূষণ মুক্ত হবে। এলাকাটিতে কৃষি প্রতিবেশ ব্যবস্থা তৈরী হবে। যা আগামীর ভয়াবহ জলবায়ু জনিত সংকটে অভিযোজনে ব্যপক ভুমিকা রাখবে।
স্মারক লিপিতে নেতৃবৃন্দ আরো উল্লেখ করা হয় যে, ইছামতি থেকে আসা মিষ্টি পানির প্রবাহ আদি যমুনা নদী-মাদার নদী হয়ে সুন্দরবনের মধ্যদিয়ে সাগরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে আছে শ্যামনগর সদরের মহাশশ্মানের উত্তর ধার থেকে কেন্দ্রিয় ঈদগাহের সামনে দিয়ে যেয়ে দক্ষিন পার্শ্বস্ত প্রায় ১০০০ গজ যমুনার উপর দিয়ে নির্মিত সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা। এ রাস্তা নির্মানের ফলে আদি যমুনা নদী বিচ্ছিন্ন হয়। এখানে ব্রীজ না করা পর্যন্ত দুপার্শ্বের প্রবাহ সংযুক্ত করা সম্ভব নয়। একই সাথে শ্যামনগর সদরের চন্ডিপুরের ১০ ফুটের স্লুইজ গেটটি সংস্কার করে নদীর প্রশস্ততা অনুপাতে ১০০ ফুটের অধিক লম্বা ব্রীজ নির্মান করা প্রয়োজন।
মুলতঃ আদি যমুনা নদীর মরণ শুরু হয় শ্যামনগর সদরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক নির্মানের সময় শ্যামনগরের (মিঠা)চন্ডিপুরের কাছে যমুনা নদীর উপর ১০ ফিটের ¯¬ুইজ গেট নির্মান করা হয়। এখানে নদীর প্রস্ততা ১০০ ফুটের বেশী। এ গেটের এলাকা হতে শুরু করে নকিপুর শশ্মাষের কাছ পর্যন্ত যমুনা সবচেয়ে বেশী দখল হয়ে আছে। নকিপুর চন্ডিপুর এলাকায় জনৈক ব্যক্তি নিজস্ব বাড়ী বানানোর সময় মূল নদীর অর্দ্ধেক দখল করে এবং একই ব্যক্তি নিজস্ব ইটের ভাটার ইট(বর্তমানে বকুলের ভাটা) পরিবহনের জন্য যমুনা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বেঁধে দেয়।
স্মারকলিপিতে ৭ দফা দাবীতে উল্লেখ করা হয় : ১.শ্যামনগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আদি যমুনা নদীর সীমানা চিহ্নিক করা ও অবৈধ্য স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। ২. নকিপুর শশ্মান থেকে চন্ডিপুর ব্রীজ পর্যন্ত সহ সমগ্র ৩য় খন্ডের আদি যমুনা নদী দ্রুত খনন করতে হবে। ৩. নকিপুর শশ্মানের সামনে ব্রীজ করতে হবে। ৪. চন্ডিপুরের কালর্ভাট ভেঙ্গে নদীর প্রশস্তা অনুযায়ী ব্রীজ করতে হবে। ৫. মাদার সংযোগস্থল হতে ৫ম ও ৪ র্থ খন্ডের সকল মাটির রাস্তা অপসারন করতে হবে। ৬. আদি যমুনার নদীর দু’ধার দিয়ে রাস্তা তৈরী করা , সেখানে বনায়ন করা ও বৈকালিক এবং প্রাত:কলিন চলাচলের পথ উম্মুক্ত করতে হবে । ৭. পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক আদি যমুনা নদীকে খাল হিসেবে টানানো সাইনবোর্ড অপসারণ করে নদী হিসেবে লেখার সাইন বোর্ড ব্যবস্থা করা।
Leave a Reply