মোদিই ঠিক। দেশের সর্বত্র জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) করা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ঝাড়খণ্ডে গোহারা হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রবল চাপের মুখে পিছু হটে একথা জানালেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর আগে অবশ্য দেশজুড়ে এনআরসি হবে বলেই দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত রবিবার দিল্লির জনসভায় ভিন্ন সুর শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীর গলায়। মোদি বলেছিলেন, সারা দেশে এনআরসি করা নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। যার পরেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। ছড়ায় নানান জল্পনা। তীব্র আক্রমণে নামেন বিরোধীরাও। মোদির ভাষণের দু’দিনের মধ্যেই নিজের অবস্থান থেকে সরে এলেন অমিত শাহ। জানিয়ে দিলেন, দেশজুড়ে এনআরসি চালুর বিষয়ে সংসদ বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা হয়নি। সঙ্গে আরও বলেছেন, জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) মধ্যেও কোনও সম্পর্ক নেই।
২০২১ সালে দেশজুড়ে শুরু হবে জনগণনা। তার আগে চলবে এনপিআরে তথ্য সংযোজনের কাজ। মঙ্গলবার এই প্রস্তাবেই সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তারপরেই এদিন সংবাদসংস্থার মুখোমুখি হয়ে এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ জানিয়েছেন, এনপিআরের মাধ্যমে যে তথ্য সংগৃহীত হবে, তা কখনই এনআরসিতে ব্যবহার করা হবে না। কারণ দু’টির মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। প্রতি ১০ বছর অন্তর দেশে জনগণনা করা হয়। অন্যদিকে, দেশের বাসিন্দাদের তালিকা তৈরি করা হয় এনপিআরের মাধ্যমে। এক রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে গিয়ে কত মানুষ বসবাস করছেন, তা জানতেই এনপিআর করা হচ্ছে। শাহ বলেন, ‘এটি একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। কংগ্রেস সরকারের আমলেও তা হয়েছে। এটা আমাদের ইস্তাহারের কোনও বিষয় নয়। আমরা এনিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতিও দিইনি। কংগ্রেস খুব ভালো একটি কাজ শুরু করেছিল। এনডিএ সরকার শুধুমাত্র পূর্বতন সরকারের পদাঙ্কই অনুসরণ করছে মাত্র।’
সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, দেশের বাসিন্দাদের নাম এনপিআরে নথিভুক্ত করা হয়। এর উপর ভিত্তি করেই গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল সরকার জানিয়েছে, তারা নিজেদের রাজ্যে এনপিআর করবে না। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পিনারাই বিজয়নের কাছে ইতিমধ্যেই আর্জি জানিয়েছেন অমিত শাহ। বলেছেন, এনিয়ে কোনও পক্ষেরই রাজনীতি করা উচিত নয়। এনপিআরের মাধ্যমে উপকৃত হবে দেশের গরীব মানুষরাই।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। তার মধ্যেই লোকসভায় দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সারা দেশে এনআরসি হবে। এমনকী, ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনী প্রচারে গিয়েও একই দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে দাঁড়িয়ে মোদি জানিয়ে দেন, দেশজুড়ে এনআরসি করার বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। মোদির এই বক্তব্যের দু’দিনের মধ্যেই ভোলবদল করলেন তাঁর সরকারের ‘নাম্বার টু’। বদলে গেল সুর।
Leave a Reply