দশকের শেষ সূর্যগ্রহণ চন্দ্র-সূর্যের ১৭২ বছরের বিচ্ছেদাবসানের সাক্ষী ‍‍`অগ্নি অঙ্গুরী‍‍` : এস এম সাব্বির খান

চোখ ধাঁধানো জোৎসনায় যেন উদ্ভাসিত আলোর প্লাবনে উথলে পড়ছে ভরামাসি পূর্ণ শশীর নিখাঁদ রূপের জোয়ার। আর সেই অপরূপা চন্দ্রাবতীর চারপাশ ঘিরে তেজস্বী পৌরষ্যে রুদ্র বহ্নিবলয় গড়ে তুলেছে অনির্বাণ প্রভাকর। দিন-রাতের মোহনায় রবি-শশীর এমনই অনিন্দ্য সঙ্গমের চিত্র ফুটে উঠেছিল পৃথিবীর আকাশে। বিজ্ঞানের কাছে এক বৈচিত্র্যময় সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক চিত্রায়ণ হলেও পৃথিবীর মানুষের কাছে মহাজাগতিক মহাশক্তির এক অলৌকিক নিদর্শন- আকাশের বুকে ধিক ধিক জ্বলতে থাকা এই ‘অগ্নি অঙ্গুরী’! অবশেষে প্রকৃতির এই অপূর্ব দৃশ্য অবলোকনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হলো যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছিল গোটা বিশ্ব। 

২০১৯ সালের শেষ তথা দশকের সর্বশেষ সূর্যগ্রহণ উপস্থিত ২৬ ডিসেম্বর। আর এমন দিনে যে আরব সাম্রাজ্যের দুবাই অভাবনীয় একটি দৃশ্য ১৭২ বছর পর দেখবে, তা আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল। তবে সেই দৃশ্য সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়নি সকলের। কিন্তু কেমন ছিল মধ্যপ্রাচ্যের অভিজাত রাষ্ট্র দুবাইয়ের আকাশে ফুটে ওঠা সেই ‘অগ্নি অঙ্গুরী’র তাক লাগানো দৃশ্য। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশের কয়েকটি অঞ্চল থেকে এই সূর্যগ্রহণ দেখতে জড়ো হন মানুষ । এমনটাই জানানো হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র প্রকাশিত সংবাদে।

কেমন ছিল সেই দৃশ্যপট
সূর্যের তেজ যেন ঢেকে দিয়ে ছিল চাঁদের শান্ত স্নিগ্ধ ছায়া। আর সেই ছায়ার চারপাশ ঘিরে দেদীপ্যমান দৃপ্ত আলোকবলয়! এই অপূর্ব দৃশ্যেরই নামকরণ করা হয়েছে ‘অগ্নি অঙ্গুরী’ বা ‘আলোর আংটি’। আর বিজ্ঞানীদের ভাষায় ‘দ্য রিং অফ ফায়ার’। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে বহু আলোচনা হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহলে। 

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২৭ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে খণ্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ। চলে বেলা ১১টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এই গ্রহণ।

এই অনবদ্য দৃশ্য রচনায় যেন খেয়ালি হয়ে উঠেছিল প্রকৃতিও। আর তাই হয় তো এদিন দিবা-রাত্রির চিরন্তন বিধান লঙ্ঘণ করে সকাল বেলাতেই এক ভরামাসি পূর্ণিমা রাতের সাক্ষী হয়ে থাকলো দুবাইবাসী! ক্রমশ সূর্যগ্রাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো-আধারির ধূসরতায় ঢাকা পরতে থাকতে চাঁদের আলো। যা সকালের নিশিকালো অন্ধকারের বুক চিঁড়ে মধ্য আকাশে এক মহাজাগতিক দৃশ্যের আবির্ভাব ঘটায়, যার লৌকিক বর্ণনা স্বার্থক করোতে পারে এমন কোনো ভাষাই যেন এই মাটির পৃথিবীতে নেই।

বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রকৃতির এই দুর্লভ দৃশ্য কালচিরের বুকে পুনরাবর্তিত হলো সুদীর্ঘ ১৭২ বছর পর। শুরুর সময়! কার্যত ইতিহাসকে আরও একবার বাস্তবের মাটিতে দেখতে পেয়েছে দুবাই। সুদীর্ঘ ১৭২ বছরের বিচ্ছেদ শেষে এ যেন চন্দ্র-সূর্যের প্রেমোহিত সঙ্গমের এক অতুলনীয় কালচিত্র পুরনো দৃশ্য ফের একবার ২০১৯ সালের শেষ সূর্যগ্রহণে উঠে আসতেই তা ক্যামেরাবন্দি হয়।

সুত্র: জাগরন

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *