হাসান মেহেদী, মাদ্রিদ, স্পেন: জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় সপ্তাহে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হবার পূর্বে মূল সম্মেলনকক্ষের সামনে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা পৃথিবীর প্রায় সাড়ে তিনশ’ অধিকারকর্মী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পক্ষে দাবিদাওয়া সম্বলিত ব্যানারসহ সমবেত হন। সমাবেশটি পরিচালনা করেন আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আমালেন সত্যানন্থ। সমাবেশে আদিবাসী, শ্রমিক, নারী, দ্বীপরাষ্ট্র ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বক্তারা ক্ষতি ও বিনাশ (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) খাতে নতুন ও অতিরিক্ত অর্থায়ন, কার্বন-বাণিজ্য বন্ধ করা, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দান, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৬০ শতাংশ কমিয়ে আনা ও দুষণকারী কোম্পানিদের জলবায়ু সম্মেলন থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান।
আন্দোলনকারীরা ‘দুষণকারীদের দূর করো, ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করো’, ‘ক্ষতি ও বিনাশ খাতে আলাদা অর্থায়ন চাই’, ‘কার্বন-বাণিজ্য বন্ধ করো, আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়’ ইত্যাদি শ্লোগানে সম্মেলনস্থল মুখরিত করে তোলেন। সমাবেশের মাঝামাঝি জাতিসংঘ নিরাপত্তা বাহিনী আমালেন সত্যানন্থকে আটক করে সম্মেলন-কক্ষের বাইরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এ সময় নিরাপত্তা-বাহিনীর আঘাতে নারীসহ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন।
নিরাপত্তা বাহিনী তিন শতাধিক আন্দোলনকারীকে জোরপূর্বক সম্মেলন-কক্ষের বাইরে নিয়ে যাবার পরেও শ্লোগান ও বক্তৃতা চলতে থাকে। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারীর ব্যাজ কেড়ে নিয়ে সবাইকে ঠেলে সম্মেলনকেন্দ্রের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। কারো কারো মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার কেড়ে নেয়া হয়। সম্মেলনকেন্দ্রের বাইরে আগে থেকেই প্রস্তুতকৃত স্প্যানিশ পুলিশ আন্দোলনকারীদের ঘিরে রাখে যাতে তাঁরা কোথাও যেতে না পারেন। এরপরও জলবায়ু-অধিকারকর্মীরা শ্লোগান দিতে থাকলে তাঁদেরকে স্প্যানিশ পুলিশ পুরো এলাকার বাইরে বহিস্কার করে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, আমরা এই নীতি নির্ধারকদের এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্যই চিৎকার করে দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু তাঁরা মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করে আমাদের জোরপূর্বক বের করে দিচ্ছে। ইনসাফ-এর সভাপতি বিদ্যা দিনকর বলেন, দুষণকারীদের বের করে না দিয়ে জাতিসংঘ তাদেরকেই বের করে দিচ্ছে যারা পৃথিবী রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে। ইন্দোনেশিয়ার অধিকারকর্মী রেজা সাহিব বলেন, এই জোরপূর্বক বের করে দেয়াই প্রমাণ করে জাতিসংঘ দুমুখো সাপের ভূমিকা নিয়েছে। তারা পৃথিবীর সুরক্ষার কথা বলছে, আবার ধনী দেশ ও দুষণকারী কোম্পানির পক্ষে কাজ করছে। নেপালের জলবায়ু অধিকারকর্মী অভিষেক শ্রেষ্ঠা বলেন, আমাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে আর এখানে কোম্পানি ও ধনী রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাদেরকে বের করে দেয়া হচ্ছে। এটা অন্যায়, এটা মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন।
পরবর্তীতে জলবায়ু-অধিকারকর্মীদের এক সভায় সকল আন্দোলনকারীর ব্যাজ ও সম্মেলনে অংশ নিতে দেয়ার দাবি জানান। তাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জাতিসংঘ ও স্প্যানিশ সরকারকে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান।
Leave a Reply