ঘন-গভীর জঙ্গলে টানা সতেরো দিন পার করতে হয়েছে। সেখানে খাবার বলতে বনের লতাপাতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আর তেষ্টা মেটাতে ছিল নদীর পানি। গভীর অরণ্যে একা আর নিঃসঙ্গ হয়েই বেঁচে থাকার লড়াই চালাতে হয়েছে।
কোনও ফিল্মের চিত্রনাট্য নয় এটা। উপন্যাসের পটভূমিকাও নয়। দু’সপ্তাহেরও বেশি আগে হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে হাইকিংয়ে বেরিয়ে আর ফেরেননি মার্কিন নাগরিক অ্যামান্ডা এলার। গভীর জঙ্গলে দীর্ঘ তল্লাশির পর শুক্রবার খোঁজ মিলল ওই তরুণীর। জীবিত কিন্তু একেবারেই বিধ্বস্ত। অ্যামান্ডাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
৮ মে হাইকিংয়ে বেড়িয়েছিলেন অ্যামান্ডা। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তার। অ্যামান্ডার খোঁজে বেরিয়েছিল একাধিক উদ্ধারকারী দল। হেলিকপ্টারে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। অনেকে ভয় পেয়েছিলেন, নিশ্চয় হয়তো তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
জঙ্গলের মাঝখানে পাওয়া গিয়েছিল অ্যামান্ডার গাড়ি। আর সেটাই আশা জুগিয়েছে। অ্যামান্ডার খোঁজে ফেসবুকে একটি পেজ তৈরি করা হয়েছিল। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ নানা আশঙ্কা দানা বাঁধতে থাকে সেখানে। অপহরণের কথা বারবার উঠতে থাকে।
কিন্তু ওই তরুণীকে যারা চেনেন, বিশেষ করে অ্যামান্ডার মা হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন। তার মেয়ে বেঁচে আছে, এমন বিশ্বাসই ছিল আম্যান্ডার মা জুলিয়া এলার। তিনি বলেন, আমি জানতাম, ও ঠিক বেঁচে আছে। কখনও আশা ছাড়িনি। এক এক সময় ভয় লেগেছে, কিন্তু নিজের মনকে শক্ত রেখেছি।
৩৫ বছর বয়সি অ্যামান্ডা যোগব্যায়ামের শিক্ষিকা, ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট। সেই সঙ্গে স্কুবা ডাইভিং, হাইকিং করেন। তার শারীরিক ও মানসিক জোর নিয়ে ভরসা ছিল সকলের। উদ্ধারকারী দলের অন্যতম জেভিয়ার ক্যান্টেলপ বলেন, ফিটনেস তো আছেই, সেই সঙ্গে স্থানীয় অরণ্যের লতাপাতা নিয়ে তার অগাধ জ্ঞান রয়েছে। যেমন, কোনটা খাওয়া যায় আর কোনটা বিষাক্ত। জানতাম ও লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারবে।
বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশির পরে মাউই দ্বীপের মাকাওয়াও সংরক্ষিত অরণ্যে হেলিকপ্টার নিয়ে খোঁজ শুরু করেন জেভিয়াররা। তন্নতন্ন করে খোঁজার পরে শুক্রবার হঠাত্ই অ্যামান্ডা দেখতে পান তারা। দু’টি জলপ্রপাতের মাঝে একটি জায়গায় খালি পায়ে হাঁটছেন অ্যামান্ডা। আর কপ্টারের দিকে তাকিয়ে পাগলের মতো হাত নেড়ে যাচ্ছেন।
জেভিয়ার বলেন, সবাই এক সঙ্গে হইহই করে উঠি। ওই তো হাত নাড়ছে অ্যামান্ডা। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না তখনও। বিশ্বাসটাই যে ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। হেলিকপ্টার থেকে একটি বাস্কেট নামিয়ে দেওয়া হয় নিচে। তাতেই চড়ে বসেন অ্যামান্ডা। ফেসবুকে ছড়িয়েছে আম্যান্ডাকে উদ্ধারের সেই ফুটেজও।
জুলিয়া জানান, মেয়ের একটি পা ভেঙেছে। এছাড়া আরও কিছু ছোটখাট আঘাতও রয়েছে। মনের উপর দিয়েও ঝড়ঝাপটা গেছে। দু’সপ্তাহ শুধুমাত্র বুনো লতাপাতা আর নদীর পানি খেয়ে বেঁচে থাকা। ১৫ পাউন্ড ওজন কমে গেছে তার। জুলিয়া বলেন, আনন্দে চোখে পানি চলে এসেছিল। ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছে।
Leave a Reply