নিজস্ব প্রতিনিধি : মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের পর ৭০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বন্ধুর হাত ও পা বেঁধে বস্তাবন্ধি করে বাগানে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে এক বন্ধু। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও স্বজনরা আশঙ্কাজনক ও অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।
বন্দকাটি গ্রামের কামরুল গাজীর ছেলে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিমুল গাজী জানান, পাবনার একটি ইটভাটায় কাজ করার জন্য এক বছর আগে তিনি তার বন্ধু একই উপজেলার কোমরপুর গ্রামের আক্কাজ মোড়েলর ছেলের ছেলে বন্ধু আব্দুল্লাহ মোড়লের মাধ্যমে কোমরপুর গ্রামের জব্বারের দোকানে বসে পাবনার একটি ভাটায় কাজ করার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৩২ হাজার টাকা নেন। এক সপ্তাহ পরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজে অপারগতা প্রকাশ করে আব্দুল্লাহ্কে ওই টাকা ফেরৎ দেন তিনি। আব্দুল্লাহ ওই টাকা ভাটা সরদার খলিলকে পরিশোধ না করে সংসারে খরচ করে ফেলে।
শিমুল জানায়, আট মাস আগে উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের রফিকুলের কাছ থেকে একটি এপাচি মোটর সাইকেল (সাতক্ষীরা-ল-১১-৯০১৪) কেনেন। দু’ মাস আগে থেকে তিনি ওই মোটর সাইকেলটি ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। গত ২৬ জুলাই সকালে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে বন্ধু আব্দুল্লাহ তাকে কৃষ্ণনগর ইউপি’র প্রয়াত চেয়াম্যান মোশরারফ হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আব্দুল্লা’র সহযোগিতায় তাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে ভাটা সরদার খলিলের পক্ষে একজন ইউপি সদস্য পরিচয়ে জোরপূর্বক ২৫০ টাকার অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা বলে মোটর সাইকেল আটকে দেওয়া হয়। পরে আব্দুল্লাহ টাকা জমা দিয়ে ওই মোটর সাইকেল ছাড়িয়ে দেবে বলে তাকে নিয়ে চলে আসে। পরদিন মোবাইল ফোনে তাকে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে ওই মোটর সাইকেল ছাড়িয়ে আনতে বলে। নইলে ঈদের আগের দিন ভাটা সরদার ওই মোটর সাইকেল বিক্রি করে দেবে বলে তাকে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে আব্দুল্লার সঙ্গে তার বচসা চরমে ওঠে।
শিমুল গাজী আরো জানান, বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে নাজিমগঞ্জ বাজারের পাশে বাবুলের স্ত্রী বোন খুকুমনিকে জমি রেজিষ্ট্রি বাবদ বাবার দেওয়া ৭০ হাজার টাকা দিতে মুকুন্দপুর চৌমুহুনীর সেলিমের ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলটি নিয়ে বের হন। বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্রই আব্দুল্লাহ থাকে ফোন করে মোটর সাইকেল ফিরিয়ে আনার কথা বলে জব্বারের দোকানে আসতে বলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দিকে সেখানে পৌঁছানো মাত্রই পিছন দিক থেকে আব্দুল্লাহ তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে মোটর সাইকেলসহ তিনি পড়ে যান। প্রায় অচেতন অবস্থায় আব্দুল্লাহসহ তিনজন তার কাছে থাকা স্মার্ট ফোন ও ৭০ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে তার দু’ হাত ও দু’ পা বেঁধে একটি বস্তার মধ্যে ভর্তি করে মুখ বেঁধে পার্শ্ববর্তী ভোন্দার বাগানে ফেলে রেখে চলে যায়। বাগানের পাশের বাসিন্দা শাহাবাজ আলীর স্ত্রী রাত ১১টার দিকে তার গোঙানী শুনে চিৎকার শুরু করে। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা এসে তাকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপাজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
শিমুলের মা আছিরন বিবি, বাবা কামরুল গাজী ও স্ত্রী নুরনাহার ও বন্ধু আব্দুর রহিম জানান, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তারা আব্দুল্লার খোঁজে কোমরপুর জব্বারের দোকানে যান। দোকনের নিকটে একটি ধান খেতে তারা সেলিমের ভাড়া মোটর সাইকেলটি পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় শিমুলকে ভোন্দারের বাগান থেকে উদ্ধার করেন। এ সময় শিমুলের ব্যবহৃত বাটন মোবাইলটি পাওয়া গেলেও স্মার্ট ফোন ও ৭০ হাজার টাকা পাওয়া যায়নি। তারা শিমুলকে হত্যা চেষ্টাকারি আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীদের শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আব্দুল্লাহ মোড়লের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিমুলের উপর হামলা, টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভিন ও বিষ্ণুপুর ইউপি সদস্য নিরাজুল ইসলাম সব জানে। শিমুল ২৬ জুলাই মোটর সাইকেল বিক্রি করতে প্রয়াত মোশরাররফ চেয়ারমানের বাড়িতে গিয়েছিল।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ইমরান হোসেন জানান, শুক্রবার ভোর তিনটায় শিমুলকে অচেতন অবস্থায় ভর্তি করা হয়। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে তার জ্ঞান ফেরে। বর্তমানে সে শঙ্কামুক্ত।
কালিগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। তবে শুক্রবার দুপুর দু’ টো পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#
Leave a Reply