নিজস্ব প্রতিনিধি : অবশেষে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন ধানদিয়া আমজামতলা এলাকায় চালক কিশোর শাহীনকে মাথা ফাটিয়ে ছিনতাই হওয়া মোটর ভ্যানটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার দিনভর অভিযান চালিয়ে তাদেরকে যশোরের কেশবপুর, সাতক্ষীরার ঝাউডাঙা ও কলারোয়ার মীর্জাপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার বায়েজিৎপুর গ্রামের নাঈমুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা বাজারের বাকের আলী ও কলারোয়া উপজেলার মীর্জাপুর গ্রামের আরশাদ আলী পাড় ওরফে নুন্নু। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ সাজ্জাদুর রহমান সোমবার সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের বলেন, বৃহষ্পতিবার রাতে নাইমুল মোবাইল করে পরদিন সকালে কলারোয়ায় ভাড়ায় যাওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রাম মঙ্গলকোর্টের হায়দার আলীর ছেলে শাহীনের সঙ্গে ৩৫০ টাকায় চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ি শুক্রবার সকালে শাহীন তার মোটর চালিত ভ্যান নিয়ে কেশবপুর বাজারের পাশে গাজীর মোড়ে আসে। সেখানে নাঈমুলসহ তিনজনকে বসে থাকতে দেখে। সেখান থেকে তারা তিনজন শাহীনের ভ্যানে উঠে কেশবপুর হাসপাতালের পাশ দিয়ে ধানদিয়া আমজামতলা নামকস্থানে একটি পাটক্ষেতের পাশে ভ্যান থামায়। এরপর তারা বলে ভ্যান রেখে তুই বাড়ি চলে যা। আপত্তি করায় ওই ভ্যানের রড দিয়ে তারা শাহীনের মাথায় আঘাত করে ভ্যান নিয়ে চলে যায়। পরে তারা ভ্যানের চারটি ব্যাটারি সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা বাজারে ছয় হাজার ২৩৬ টাকায় বিক্রি করে। সেখান থেকে ভ্যান নিয়ে তারা কলারোয়ার মীর্জাপুর মোড়ের আরশাদ পাড় ওরফে নান্নুর দোকানে সাড়ে সাত হাজার টাকায় বিক্রি করে। সোমবার দিনভর অভিযান চালিয়ে ছিনতাইয়ের মুল পরিকল্পনাকারি নাঈমুলকে তার কেশবপুর থেকে প্রথমে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি ঝাউডাঙা বাজার থেকে বাকের আলী ও কলারোয়ার মীর্জাপুর মোড়ের নিজ দোকান থেকে আরশাদ আলী পাড়কে গ্রেপ্তার করে। নাঈমুলের স্বীবকারোক্তি অনুযায়ি আরো তিনজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানা পুলিশ সুপার। এ সময় সাংবাদিকরা পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন যে ২৬ জুন সদরের লাবসা ইউনিয়নের খেজুরআঙা গ্রামের অলোক সরকারের মোটর ভ্যানটি সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল থেকে ছিনতই হলেও গত সোমবার পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি। প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ভ্যান চালক ও মাদ্রাসা ছাত্র যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোর্ট গ্রামের বাড়ি থেকে হায়দার আলীর ছেলে শাহীনকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন ধানদিয়া ইউনিয়নের আমজামতলা নামক স্থানে পাটক্ষেতের পাশে নিয়ে আসে ছদ্মবেশি যাত্রীরুপী ছিনতাইকারিরা। সেখানে তার মাথায় আঘাত করে ভ্যান নিয়ে চলে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শাহীনকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর ও পরে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনহি হওয়ায় শনিবার রাত ১০টায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এণ্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নেওয়ার পর রোববার ভোর চারটায় শাহীনের অপারেশন করা হয়। বর্তমানে সে ঢামেক হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আছে। এ ঘটনায় শাহীনের বাবা হায়দার আলী বাদি হয়ে শনিবার কারো নাম উলে¬খ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সাতক্ষীরা পুলিশ ও যশোর পুলিশ যৌথভাবে ছিনতাইকারিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। ভ্যান চালক শাহীনকে সহায়তার জন্য এক আমেরিকান প্রবাসী ৫০ হাজার টাকা পাঠান। দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার সকালে সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটি প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। মানববন্ধন চলকালে গত ২৬ জুন সাতক্ষীরা বাসটার্মিনাল থেকে লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙা গ্রামের গরীব ভ্যানচালক অলোক সরকারের ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি উদ্ধারসহ তালা উপজেলার বারাত গ্রামের পুষ্প রানী দাসকে ধর্ষণের পর হাত ও পায়ের আঙুল কেটে গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা ও শহরতলীর ইসলামপুর চরের মুকুল হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
Leave a Reply