সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে প্রেসক্লাবের নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে কমান্ডো স্টাইলে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে রবি সমর্থক সন্ত্রাসী বাহিনী। এই হামলায় প্রেসক্লাবের সভাপতি সম্পাদকসহ ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। হামলার সময় প্রেসক্লাবের পাশে অবস্থিত সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশের বারবার সহায়তা চেয়ে টেলিফোন করা হলেও হামলা শেষ হওয়ার পর পুলিশ প্রেসক্লাবে পৌছায়। এসময় পুলিশের সামনেই হামলাকারীরা অবস্থান করছিল। অপরদিকে হামলাকারীদের প্রোটেকশনে প্রেসক্লাবের সামনে ও শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে অবস্থানকারী ১০০/১৫০ সন্ত্রাসী বীরদর্পেই পুলিশের সামনে দিয়ে চলে যায়। একই সময় সিবি হাসপাতালের মালিক সাবেক ছাত্রদল নেতা একেএম আনিসুর রহমান থানায় ওসির সামনেই অবস্থান করছিল। উক্ত সন্ত্রাসীদের সাথে সদর এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ভাই মীর মাহামুদ আলী লাকী ও মাহী আলমকেও দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, মনিরুল ইসলাম মনি, শামীম পারভেজের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন প্রেসক্লাবে ঢুকেই সিসিটিভির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এরপরপরই লাঠিসোটা, লোহার রড়সহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র সহকারে রেজাউল, কামরুল, তুহিন, খন্দকার আনিসুর রহমান, মনি, অমিত, শহীদুল, হাফিজুল, টুটুল, শাহ আলম, আক্তারুল, পলাশসহ আরো ৫০/৬০জন সন্ত্রাসী প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে। এসময় প্রেসক্লাবের অতিথিকক্ষে অবস্থানকারী সভাপতি আবু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপি, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জী, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, মোহনা টিভির প্রতিনিধি আবুল জলিলসহ অন্যদেরকে তারা বেদমভাবে মারপিট করতে থাকে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক আব্দুল জলিলকে টেনে হেঁচড়ে প্রেসক্লাবের সামনে নিয়ে সেখানে ক্রিকেটের উইকেট দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। আধাঘন্টাব্যাপি চলা এই তান্ডবের পর সন্ত্রাসীরা প্রেসক্লাবের হলরুমে অবস্থান নেয়। এরপরপরই সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়।
হামলায় আহত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ ও মোহনা টিভির
জেলা প্রতিনিধি আবদুল জলিলকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।
ঘটনার সময় প্রেসক্লাবের সামনে ও সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এমপি
মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ভাই মীর মাহামুদ আলী লাকী ও মাহী আলমকে
সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। এছাড়া জিএম মনিরুল ইসলাম মিনি ও দৈনিক
পত্রদূত সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিন হত্যা মামলার আসামী আব্দুস
সবুরের ছেলে আবু সাঈদের নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্ত্রসহকারে আরো কয়েকজন
সন্ত্রাসীকে প্রেসক্লাবের সামনের চত্তরে দেখা যায়।
এদিকে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর
রহমান এবং উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা প্রেসক্লাবে আসেন। তারা এই সন্ত্রাসী
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, একটি মহল সাতক্ষীরায় আইনশৃংখলা
পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায়। তারাই নেপথ্যে থেকে ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে এই
হামলা চালিয়েছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অভিন্ন ভাষায় বলেন ‘সাতক্ষীরার
মত শান্ত জেলাকে যারা অশান্ত করে ফায়দা লুটতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন
প্রয়োগ করা হবে’। তারা বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রেসক্লাবে
পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া আক্রান্ত সাংবাদিকরা মামলা করলে হামলাকারীদের
বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রেসক্লাবে কেবলমাত্র সাধারণ ভোটার
সদস্য ও সহযোগী সদস্য ছাড়া আর কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে
পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সব সাংবাদিক। তারা বলেন, ১৯৭৩ থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এই প্রথম রক্তপাতের ঘটনা ঘটলো। সাধারণ সাংবাদিকরা হামলাকারী ও হামলার নেপথ্য গডফাদারদের চিহ্নিত করেছেন দাবি করে বলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে যেসব সাংবাদিক এই হামলার সাথে জড়িত তারাও রক্ষা পাবে না বলে জানানো হয়। আজ শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে প্রেসক্লাব।
উল্লেখ্য গত ২০ মার্চ অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ
সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব। এ
ঘটনার আড়াই মাস পর গত বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সেই সিদ্ধান্ত
প্রত্যাহার করে নেয়। এর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে
সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো। এছাড়া সম্প্রতি সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ,
সদর উপজেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সীমাহীন অনিয়ম দুর্ণীতির
খবর পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হলে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে দুর্নীতিবাজরা। হামলাকারী
সন্ত্রাসীদের মধ্যে ঐসব দুর্নীতিবাজদেরও দেখা যায়।
Leave a Reply