আব্দুল জলিল: সমাজের অসহায়, বিধাব, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের ভাগ্য বদল হয়েছে ব্যাগ তৈরি কাজ করে। আর এই ব্যাগ তৈরির কাজে সহযোগিতা করছে সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত প্রেরণা নামের একটি নারী সংগঠন। এখানে কাজ করে হয়েছে শতাধিক নারী স্বাবলম্বী। তাদের ছেলে মেয়েরা লেখা পড়ার পাশাপাশি সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে । প্রেরণার থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে অনেকে নিজেরাই ব্যাগ তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে । তাদের তৈরি ব্যাগ সাতক্ষীরা শহরসহ জেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে ।
জানাযায়, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার স্কুল শিক্ষিকা শম্পা গোস্বামী সমাজের সুবিধা বঞ্জিত নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ শুরু করেন। এই কাজের জন্য তিনি ২০১৫ সালে কালিগঞ্জ উপজেলা মহিলা অধিদপ্তর থেকে অনুমতি পত্র নেন। প্রথমে তিনজন নারীকে নিয়ে কাগজের ব্যাগ তৈরির কাজ করতেন। আর এই সংগঠনের নাম দেয় হয় প্রেরণা। চার বছরের ব্যবধানে এই প্রেরণার সদস্য সংখ্যা এখন শতাধিক । তাদের তৈরী কাপড়ের ব্যাগ বিক্রি হয় জেলার সব দোকানে। সাতক্ষীরা শহরের লেক ভিউ, ভাগ্যকুল, আল-বারাকা, প্রিয় গোপাল, মাওয়া চাইনিজ, নুসরাত ফ্যাশান, জায়হুন, আদি ঘোষ, সাগর সুইটসসহ ৩০ নাম করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রেরণার তৈরি ব্যাগে পন্য বিক্রি করছে । এই সব দোকানের লেভেল লাগিয়ে তারা ব্যাগ তৈরি করা। প্রতিটি ব্যাগ ৩ টাকা থেকে শুরু করে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় । প্রতি মাসে ১ থেকে দেড় লাখ পিচ ব্যাগ তৈরি করে প্রেরণার নারীরা । তারা কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রেরণা কার্যালয়ে অথবা বাড়িতে বসে কাজ করে ।
প্রেরণার অফিসে যেয়ে দেখা যায় ভীষণ ব্যস্ত তারা । কাপড় কাটা, লেভেল লাগানো, মেসিনে সেলাই কাজে হিমসিম খাচ্ছে সবাই । দম ফেলার সময় নেই তাদের । কাজের ব্যস্ততার মধ্যে রেহানা পারভীর জানান, ছয় বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন তিনি । সেই থেকে আর স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না। কাজ করার ক্ষমতা হারায়। এখন তার দিন বদল গেছে। প্রেরণায় তাকে কাজ দিয়েছে।এসময় ফতেমা পারভীন জানান .স্বামী তিন বছর আগে তালাক দিয়েছে । একটি বাচ্ছা আছে । প্রেরণায় কাজ করে তিনি সংসার চালান। আর প্রেরণার দিদি তাকে আইনি সহয়তা দিয়ে থাকেন।
কথা হয় মহিমা পারভীনের সাথে। সে বলল তার পিতা মাতা গবীর মানুষ । লেখা পড়া করতে পারছিল না। তার শিক্ষিকা শম্পা গোস্বামীর কথামত অবসর সময় এখানে কাজ করেন ।এখন পড়াশুনা চলছে আবার পিতা মাতাকে সহযোগিতা করছে সে। তার পাশে বসা নাছিমা খাতুন জানালেন তার স্বামী সামান্য কাজ করে। সামান্য উপার্জন দিয়ে আগে সংসার চলতো না । প্রেরণায় কাজ পেয়ে সে তার স্বামীকে সহযোগিতা করছে ।উপজেলার বাজার গ্রাম রহিমপুরের মঞ্জুয়ার রহমান জানান, পরিবারের লোকজন বাড়িতে বসে ব্যাগ তৈরি করে। এজন্য তিনি এসেছেন ব্যাগ তৈরির সরঞ্জাম নিতে ।
প্রেরণার ব্যবস্থাপক মেহেরুন নেছা জুথি জানান, তাদের তৈরি ব্যাগ ৩ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। জেলার বিপনি দোকান গুলো তাদের নিকট থেকে ব্যাগ ক্রয়ের জন্য আগেই অর্ডার দেন ।
প্রেরণার পরিচালক শম্পা গোস্বামী জানান , যাদের বাহিরে কাজ করার সুযোগ নেই তারা এখানে কাজ করে। প্রেরণা থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে অনেকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে। সুিবধা বঞ্চিত এসব নারীরা প্রেরণায় কাজ করে টিকে আছে । তাদের বাচিয়ে রাখতে হলে সরকারি- বেসরকারি সহযোহিতা প্রয়োজন । তবেই হাজার হাজার নারীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব ।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, প্রেরণা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । সমাজের সুবিধা বঞ্চিত নারীরা এখানে কাজ করে । অসহায় নারীদের বেচে থাকার একটি অবলম্বন করে দিয়েছে প্রেরণা ।
Leave a Reply