নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ রোহিঙ্গা আতংকে ভুগছেন সাতক্ষীরার মানুষ। দিনে অথবা রাতে ছদ্মবেশে অপহরণ কিংবা অন্য কোন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এমন গুজবে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজন রোহিঙ্গাকে ছেলেধরা কথিত অপরাধে আটক করেছে পুলিশ।
তবে, পুলিশ বলছে এরা রোহিঙ্গা নয়, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা ধারণা করা যায় এরা বিকৃত মস্তিষ্ক।
গ্রামবাসীরা জানান, তাদের এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই খবর আসছে যে, ওই পাড়ায় রোহিঙ্গা ঢুকছে। তারা শিশু অপহরণ কিংবা অন্য কোন অপরাধের চেষ্টা করছে। এক কান দু’কান করে এ খবর গ্রামময় ছড়িয়ে পড়তেই নীরিহ গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে রাত জেগে রোহিঙ্গা ধরার চেষ্টা করছে। এমন ঘটনা জেলার তালা, সাতক্ষীরা, দেবহাটা ও কলারোয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘটেছে।
দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উজ্জল কুমার মৈত্র জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পারুলিয়া ইউনিয়নের কদবেল তলা এলাকা থেকে এক রোহিঙ্গা নারীকে গ্রামবাসী আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। ওই নারী কয়েকদিন ধরে সেখানে ঘোরাফেরা করছিলেন।
গ্রামবাসীর ধারণা, তিনি তার সঙ্গীদের নিয়ে ছেলে ধরার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার বাশদহা এলাকা থেকে জিতেন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। গ্রামবাসীর অভিযোগ, রোহিঙ্গা সদস্য জিতেন ভবানীপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে, তালা ও পাটকেলঘাটা থানা এলাকা থেকে আরও তিন ব্যক্তিকে পৃথক স্থান থেকে গ্রামবাসীর সহায়তায় আটক করেছে পুলিশ। তাদের নাম পরিচয় জানা না গেলেও পুলিশ বলছে, তারা অপ্রকৃতিস্থ।
তবে, গ্রামবাসীর ধারণা, তারাও রোহিঙ্গা সদস্য এবং ছেলে ধরার মতো অপরাধের চেষ্টা করছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে বেশ কিছু সংখ্যক নারী ও পুরুশ রোহিঙ্গা সদস্য সেখানকার আশ্রয় শিবির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানব পাচারকারী দালালদের মাধ্যমে তারা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এই লক্ষ্যে বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সদস্যকে সাতক্ষীরা সীমান্তে আনার পর দালালরা তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। পরে এসব রোহিঙ্গা গ্রামের দিকে ঢুকে পড়েছে। তারাই নানা ধরণের অপরাধের চেষ্টা করছে। এদেরই কারণে জেলাব্যাপী ছেলে ধরা আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি রোহিঙ্গা নাম শুনলেই গ্রামবাসী আতংকিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান জানান, ছেলে ধরা রোহিঙ্গা বিষয়ে যা প্রচার হচ্ছে তার সবই গুজব। কলারোয়ায় যে দুই নারী ধরা পড়েছেন তারা মূলত ভিখারী। সেখানকার একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে তারা ভিক্ষা করেন। গ্রামবাসী তাদের ছেলে ধরা রোহিঙ্গা মনে করে আটক করে। প্রকৃতপক্ষে এই কয়দিনে সন্দেহভাজন যে কয়জনের সন্ধান মিলেছে তারা কেউই রোহিঙ্গা নন। এমনকি তারা কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন প্রমাণও মেলেনি। তিনি গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন
Leave a Reply