নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
অবশেষে মৃত্যুর ৫ দিন পর নমিতার লাশের ময়না তদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় বলুয়া নদীর রাজাপুর শ্মশানে সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৩ বছর আগে ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার(১০ মে) সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। তবে মামলাসহ নানা আইনী জটিলতায় তার লাশের সৎকার কিংবা ময়না তদন্তে সায় ছিলনা স্থানীয় প্রশাসনের। বাধ্য হয়ে গত ৫ দিন যাবৎ তার লাশ পড়ে ছিল বাড়িতেই।
এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যুর ৪ দিন পর সোমবার (১৩ মে) নমিতার ভাসুর ও সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী প্রভাষক আদিত্য ব্যানর্জি সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নমিতার মৃত্যু ও তার সৎকারের আবেদন করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিলাস মন্ডল তার জবানবন্দী ও নালিশী দরখাস্ত পর্যালোচনা করে ঘটনার সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহনপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ আগামী ১১ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা শাখা (সিআইডি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
এরপর সিআইডি’র তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার লাশের সুরোতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের পর বিকেলে তার লাশ নেয়া হয় সরাসরি বলুয়া নদীর রাজাপুর মহা শ্মশানে। সেখানে নমিতার ৩ সন্তানসহ স্বজনদের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার সৎকার সম্পন্ন হয়।
প্রসঙ্গত,সাতক্ষীরার তালায় ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জের ধরে প্রায় তিন বছর আগে শ্লীলতাহানি ও মারপিটে গুরুতর আহত তালা উপজেলার মেশারডাঙ্গা এলাকার কার্ত্তিক ব্যাণার্জীর স্ত্রী নমিতা ব্যানার্জীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয়। তবে মামলাসহ নানা জটিলতায় তার মৃত দেহটির সৎকার হয়নি। লাশ পড়ে ছিল গ্রামের বাড়িতেই। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ ও মামলার বিবরণে জানাযায়, ২০১৬ সালের অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে এক নম্বর মেশারডাঙ্গা ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত কুলপোতার মৃত করুণাময় সানার ছেলে নিমাই পদ সানা নির্বাচনে তার সমর্থন না করায় ২৩ মার্চ দুপুর ১২ টার দিকে স্ব-দলবলে হানা দেয় মেশারডাঙ্গার মৃত প্রফুল্ল ব্যাণার্জীর ছেলে আদিত্য ব্যানার্জির বাড়িতে। তবে ঘটনার সময় আদিত্য বাড়িতে না থাকায় তার ভাইয়ের স্ত্রী নমিতা ব্যাণার্জী (৪০) কে শাবল দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরণের শাড়ি ছিড়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়।
পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে তালা হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে নমিতা ব্যানার্জির অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনায় পরের দিন ২৪ মার্চ কার্ত্তিকের ভাই আদিত্য ব্যাণার্জী বাদী হয়ে নিমাই পদ সানাকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনের নামে তালা থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং ১২। তাং-২৪/৩/২০১৬। জি আর ২৯/১৬,পওে মামলাটি বিচারের জন্য চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়। যার টি.আর মামলা নং ৩০৮/১৮।
এদিকে মাথায় গুরুতর যখম নমিতাকে নিয়ে তার পরিবার দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর ক্রমাবনতির একপর্যায়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার। তবে মামলাসহ নানা জটিলতায় গত ৪ দিনেও সৎকার কিংবা ময়না তদন্ত হয়নি নমিতার।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা শাখা (সিআইডি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন বলেন,আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভারের কাগজপত্র পেয়েছেন তারা এবং ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
Leave a Reply