ডেস্ক রিপোর্ট: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; একটি নাম, একটি চেতনা। তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা। আজ তাঁর ৯৯তম জন্মদিন। তিনি সমগ্র জীবনব্যাপী একটিই সাধনা করেছেন— বাংলা ও বাঙালির মুক্তির জন্য নিজের জীবন উত্সর্গ করা। তাঁর জন্মদিনেই পালিত হয়ে থাকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’। দিনটিকে ঘিরে সাতক্ষীরাসহ দেশের সকল জেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে জন্ম নেওয়া মুজিব পরবর্তীতে আবির্ভূত হন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির নেতা হিসেবে। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুনের চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে। তাঁর জন্যই বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্ম হয়। তাঁর ডাকেই বাঙালিরা অস্ত্র ধরে পাক শাসন থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দেয়। দুঃখী মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের মুক্তির পথ দেখাতে রাজনীতিতে আসেন মুজিব। কিশোর বয়স থেকেই তাঁর মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জন্ম নেয়। আর এতে করেই তাঁর মধ্যে সৎসাহস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানসিকতার জন্ম নেয়।দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে যখন পাকিস্তানের জন্ম হয় তখনই তিনি বুঝতে পারেন এই রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে বাঙালিরা নির্যাতিত-নিষ্পেষিত হবে। তাই তিনি নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৮-এর আইয়ুব সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা, ১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান ও সত্তরের নির্বাচনসহ প্রতিটি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। আর এ কারণে তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে জানায় অকুণ্ঠ সমর্থন।সত্তরের নির্বাচনে মুজিবের বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। অবশেষে একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এক ভাষণে বাঙালিদের জাগিয়ে তোলেন। এরমাত্র কয়েকদিন পরই ২৫ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আর শেখ মুজিবের ডাকে বাঙালি জাতি যুদ্ধে নামে। দীর্ঘ নয় মাস পরই যুদ্ধ জয়ে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে কারাবন্দি থাকেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সেই সুযোগ বেশিদিন পাননি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতা। শুরু হয় দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত দিকে নিয়ে যাওয়ার পালা। ১৯৭৫-পরবর্তী ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস
বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিতে হবে আজকের শিশুদেরই। তাই শিশুরা যেন সৃজনশীল মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে- তিনি সব সময়ই সেটা চাইতেন। তাই জাতির জনকের জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ৭৫- এর পর বাংলাদেশে অপশাসনের এক অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে। এরপর কেটে যায় প্রায় দুদশক। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ক্ষমতাসীন হয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের সরকার। শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর এর পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ দিবসটি পালন শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন বন্ধ থাকে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হলে তখন থেকে ১৭ মার্চে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন। দিনটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রশাসন, শিল্পকলা একাডেমি এবং জেলা ও উপজেলার সব দপ্তর বা সংস্থার সমন্বয়ে দিবসটি পালন করা হবে।
Leave a Reply