আর্ন্তজাতিক বানিজ্য কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালকের মতে, নারীদেরকে উদ্যোক্তা হবার জন্য কারিগরি ও আর্থিক সুবিধা প্রদান করলে পুরুষ সহকর্মীদের থেকে সমাজ অনেক বেশী সুবিধা পায় । একজন নারী সফল উদ্যোক্তা হলে পরিবার নানাভাবে উপকৃত হয় যেমন ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ব্যয়ভার বহন, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত, পরিবারের চিকিৎসার খরচ যোগান এবং পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরা ভরসার জায়গা খুজে পান।
খাদিজা [ছদ্মনাম] দিন মজুর ৪ সন্তান পরিবারের বড় মেয়ে হওয়ায় স্বপ্নকে বাস্তবতায় আনতে পরিবার থেকে সমাজের সাথে তিনি অনেক সংগ্রাম করেছেন। পরিবার ও আত্মীয় স্বজন তাকে বিয়ে দেবার জন্য অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছিল এবং প্রতিবারই খাদিজা সবিনয়ে প্রস্তাব ফিরে দিয়ে বাবা-মাকে তাঁর স্বপ্নের কথা বলেছেন, পড়া লেখা এবং ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাড়াতে চেয়েছেন। অনেকের কটূক্তি, আত্মীয় স্বজনের দূরে সরে যাওয়া, বাবা-মা’র বিরক্ত খাদিজাকে হার মানাতে পারেনি।
খাদিজা এখন সফল নারী উদ্যোক্তা। পরিবারে আগের মত অভাব-অনটন নেই। বাবা-মা এখন খাদিজার ব্যবসার সহযোগী। ছোট ভাই-বোনেরা পড়ালেখা করছে। খাদিজা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এমনকি জাতীয় বিভিন্ন গুরত্বপূর্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান। নিজ এলাকায় খাদিজা সবার আর্দশ এবং অনেকে তাকে অনুসরন করে।
আজকের খাদিজা হবার পেছনে পরিবার, সমাজ ছাড়াও তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দিনমজুর পরিবারের সন্তান হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে আর্থিক সুবিধা পেতে তাকে অনেক কাঠখড় পোহতে হয়েছে। ব্যবসা সংক্রান্ত কোন জ্ঞান না থাকায় অন্যের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার কোন সুযোগ পাননি কটূক্তির ভয়ে।
একজন উদ্যোক্তাকে সফল হতে হলে নিজের আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরী। খাদিজা প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী এবং সবসময় মনে করেন মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।
বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা হবার জন্য সুযোগের পাশাপাশি কিছু সমস্যাও রয়েছে। সমস্যা হিসাবে প্রথমে আসে ব্যবসা শুরুর অর্থায়নের প্রসঙ্গ। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের সম্পদের অংশীদারি থাকলেও বাস্তবতায় তা যৎসামান্য দেখা যায়। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে [অনেকাংশে পরিবর্তন হচ্ছে] নারীরা স্বামী সংসার নিয়ে গৃহে কাজ করবে। এরুপ পরিবেশে নারীরা সবচেয়ে ভীত থাকে যদি ব্যবসা করতে গিয়ে তারা ব্যর্থ হন।
একটি পরিবারে স্বামী এবং স্ত্রীর অবদান অপরিসীম। যদি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্বামী ও স্ত্রীর সমান অংশগ্রহণ থাকে তাহলে পরিবারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশী হবে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং এ বিশাল জনগোষ্ঠির নারীদের যদি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অর্ন্তভূক্ত করা যায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বর্তমান অর্জনের চেয়ে বেশী হবে বলে ধারনা করা যায়। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের জিডিপিতে বর্তমান নারীর অবদান ১০% এবং উদ্যোক্তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন করা হলে তাদের জিডিপিতে অবদান হবে ২৫%.
নারীদের উদ্যোক্তাদের সুযোগ হচ্ছে পরিবারকে সময় দিয়ে নিজে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে দেশে কিছু প্লাটফরম তৈরী হয়েছে এবং বিশেষ করে সরকারের প্রচেষ্টায় কিছু ব্যাংক নারীদের উদ্যোক্তা হবার পিছনে লগ্নি করছে।
নারী উদ্যোক্তা হতে হলে কিছু বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে। প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে নিজের ব্যবসা সর্ম্পকে স্বচ্ছ ধারণা এবং এলাকা ভিত্তিক চাহিদা নিরুপণ করতে হবে। উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে দেশের উত্তরাঞ্চলে যে পণ্যের চাহিদা থাকবে দক্ষিণাঞ্চলে উক্ত পণ্যের চাহিদা নাও থাকতে পারে। ক্রেতা সর্ম্পকে ভাল ধারণা রাখতে হবে যেমন তাদের পেশা, আয়, পরিবারের জীবনমান ইত্যাদি বিষয় কারন ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের মান নির্ধারন করতে হবে।
দেশের অর্থনীতিতে নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধির জন্য সরকার, বেসরকারী সংস্থা ও সুশীল সমাজের গুরত্বপূর্ন ভূমিকা আছে। সরকারে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে নারীর অগ্রগতির জন্য। কিন্তু সরকারকে দেখতে হবে গৃহীত পদক্ষেপের সহিত নারীর অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক কিনা। যদি প্রত্যাশিত হারে নারীর অংশগ্রহণ না হয় তাহলে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে কারনগুলো কি এবং তা নিরসনের উপায় বের করতে হবে।
দেশের বেসরকারী সংস্থাসমূহকে নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধির জন্য অনুকুল পরিবেশ তৈরী করতে সহায়তা করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সমাজ সচেতনতামূলক কার্যক্রম, বিভিন্ন এলায়েন্স, প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করতে হবে। সুশীল সমাজকে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাড়াতে হবে, তাদের বিকাশের জন পথ প্রস্বস্ত করে দিতে হবে।
দেশের অর্থনীতি বির্নিমানে নারীদের অংশগ্রহন বৃদ্ধি পাক এবং অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই আগামীর বাংলাদেশ।
মোঃ মাহিউল কাদির
উন্নয়ন কর্মী
Leave a Reply