এম. কামরুজ্জামান : জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত (সাতক্ষীরা ৩১২) নারী আসনে আওযামী লীগের কোটায় এমপি হওয়ার জন্য সাতক্ষীরা হাফ ডজন নেত্রী কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীসভার শপত গ্রহণ শেষে মূলত সাতক্ষীরায় আলোচনা শুরু হয়েছে নারী সংসদ সদস্যদের নিয়ে। লবিং,তদবির, দৌড়ঝাপে কে কার থেকে এগিয়ে যেতে পারে তানিয়ে রিতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের নাম ভাইরাল হয়েছে। প্রার্থীর আলোচনায় ছয় প্রার্থী শীর্ষে রয়েছেন।
সাতক্ষীরা ও যশোর জেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন ৩১২। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ পর্যন্ত যে ১০ টি জাতীয় সংসদ গঠন হয়েছে তার মধ্যে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ ও দশম জাতীয় সংসদে সাতক্ষীরার নারীরা জায়গা পেয়েছিল। ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে সাতক্ষীরা থেকে বিএনপি’র নেত্রী ¯িœগ্ধা হক সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নিহেবে শপত নেন। আর দশম জাতীয় সংসদে সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মিসেস রিফাত আমিন সংরক্ষিত আসনে এমপি হিসেবে শপত নেন। তিনি আবারও একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে লড়তে চান বলে গুঞ্জুন রয়েছে। তবে তিনি বয়েসের কারনে শারীরিক ভাবে বেশ অসুস্থ্য। বর্তমানে তিনি বিদেশে রয়েছেন।
সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন চাইবেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক , জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব লায়লা পারভিন সেজুঁথি। তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার মরহুম পিতা সাতক্ষীরার বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স.ম আলাউদ্দিন সাতক্ষীরা-১ আসনের এমপি ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন নিজ পত্রিকা অফিসে কর্মরত অকস্থায় আততায়ির গুলিয়ে তার পিতা নিহত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লায়লা পারভিন সেজুঁথি দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আসনটি শরীক দলের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে সে ইচ্ছা আর পূরন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে লায়লা পারভিন সেজুঁথি মাঠে কাজ করছেন। মাঠ কাঁপানো নেত্রী হিসেবে তিনি পরিচিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার জন্য তিনি এবার কোমর বেঁধে নেমেছেন। লায়লা পারভিন সেজুঁথি বলেন, আমার পিতা ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবীদ। ছোট বেলা থেকেই বাবার কাছে শিখেছি কি ভাবে মানুষের সেবা কিভাবে করতে হয়। আমি এমপি হতে পারলে মানুষের সেবা নিশ্চিত করবো, জেলার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবো।
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খ্যাতিমান কন্ঠশিল্পী, সাতক্ষীরা জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশানের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা শিল্পী ঐক্যজোটের সাংস্কৃতিক সম্পাদক চৈতালি মুখার্জ্জী। তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
এপার বাংলার সন্ধ্যাকণ্ঠি হিসেবে খ্যাত চৈতালি মুখার্জ্জী। বয়েসে তরুণ এই কণ্ঠশিল্পীর নামের সাথে সবাই পরিচিত। একজন গুনিশিল্পী হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে পুরো দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। একজন ভালো কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তার জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একজন গুণিশিল্পী হিসেবে একাধিক সম্মাননা পয়েছেন। দেশের জন্য বয়ে এনেছেন একাধিক পুরস্কারও। আওয়ামী লীগ পরিবারে জম্ম চৈতালী মুখার্জী একজন দক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠক। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবো। আমি জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শিল্পিদের জন্য নিবিদিতপ্রাণ। দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে আজ পর্যন্ত কোন কণ্ঠশিল্পীকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি করা হয়নি। সেদিক থেকে আমি আশাবাদি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার পেশাগত বিষয়টি নিশ্চই বিবেচনা করবেন। তিনি বলেন, আমার পিতা কাত্তিক চন্দ্র মুখার্জী দক্ষিণাঞ্চলের একজন খ্যাতিমান পুরোহিত। আওয়ামী লীগ ঘরেই আমার জম্ম। স্বামী টিটু চক্রবর্তী দেশের খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক। আমি সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে পারলে এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সাতক্ষীরা তথা দেশের উন্নয়নে কাজ করবো।
সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক , সাতক্ষীরা পৌরসভার মহিলা কমিশনার জ্যোসনা আরা। তিনিও লবিং, তদবির, দৌড়ঝাপে পিছিয়ে নেই। জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এমপি হওয়ার জন্য। জ্যোসনা আরা বলেন, আমি দলের জন্য পরীক্ষিত কর্মী। দল আমাকে মনোনয় দিলে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবো।
সংরক্ষীত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরের স্ত্রী,সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি চৌধুরী নুরজাহান মঞ্জুর। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নুরজাহান মজ্ঞুর জানান , স্বামীর ১৮ বছর পুলিশের চাকুরীর বয়স সীমা চাকরীর সুবাদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে কাঁটিয়েছি। ২০১৩ সালে অশান্ত সাতক্ষীরায় তখন কোন পুলিশ সুপার বেশী দিন থাকতে পারেননি। সে সময় আমি আমার পুলিশ সুপার স্বামীর সঙ্গে পরিবারের সকলকে নিয়েই থেকেছি। সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষকে সুখে ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার জন্য একযোগে সর্বক্ষণ কাজ করেছি। জীবনের বাকি দিনগুলো সাতক্ষীরাতেই কাঁটাবো মানুষের সেবাই নিয়োজিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হওয়ার জন্য সাতক্ষীরা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি , সাতক্ষীরা পৌরসভার মহিলা কমিশনার ফারহা দীবা খান সাথি মাঠে নেমেছেন। তিনি দর্ঘিদিন ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভার মহিলা কমিশনার হিসেবে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এমপি হতে পারলে সাতক্ষীরার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবো।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য, সাতক্ষীরা জজ কোটের এপিপি অ্যাডভোকেট শাহানাজ পারভিন মিলি। সংরকি। সংরক্ষিত আসনে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। নারী নেত্রী হিসেবে তার রয়েছে বেশ পরিচিতি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পাঁচ বছর কাজ করেছেন। বাল্য বিবাহ, যৌতুকের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত ১৫ জানুয়ারী থেকে আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম ছাড়বেন বলে ঘোষনা করেছেন। সাতক্ষীরার আলোচিত এসব প্রর্থীরা ইতোমধ্যে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। কেউ কেউ ঢাকায় পৌছে শুরু করেছেন লবিং।
Leave a Reply