1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন
৩ কার্তিক, ১৪৩১
Latest Posts

লাখ টাকায় দৈনিক হাজার টাকা সুদের জালে আটকা পড়েছে সাতক্ষীরার আশাশুনির গ্রাহকরা

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : রবিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯
  • ১৪৪ সংবাদটি পড়া হয়েছে


নি জস্ব প্রতিনিধি। লাখ টাকায় দৈনিক সুদ এক হাজার টাকা। জরুরি প্রয়োজনে এই শর্তে টাকা নিয়ে দেনার জালে জড়িয়ে পড়েছেন আশাশুনির লতিকা সরকার। মহাজনের দাবি তার কাছে এখনও পাওনা সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা। একইভাবে ঋণ নিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষক তাপস চক্রবর্তী। ঋণ শোধের পরও মহাজন তার ঘাড়ে এখন চাপিয়েছেন ২৪ লাখ টাকার দেনা।
আশাশুনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যহাটি গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবার এ ধরনের ঋণের জালে আটকা পড়েছেন। তাদের মহাজন নাজমা বেগম ও তার স্বামী আব্দুর রশিদের দাপটের মুখে স্কুল-কলেজে ছেলে মেয়েদের পাঠাতে পারছেন না। স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্পে তাদের জমি লিখে নিয়েছে নাজমা-রশিদ দম্পতি। টাকা আদায়ে মাছের ঘেরও লুট করে নিয়েছে তারা। এখন আইনি নোটিশ দিয়ে ঋণ গ্রহীতাদের পিছু নিয়েছে নাজমা-রশিদ দম্পতি।
রোববার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আশাশুনির ধান্যহাটি গ্রামের বেশ কয়েকজন নারী পুরুষ ঋণ গ্রহীতা এসে এই অভিযোগ করে বলেন, এখন তারা বাড়িতে টিকতে পারছেন না। তাদের সহায় সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেনার দায়ে তারা এখন খানিকটা গা ঢাকা দিয়ে চলছেন।
ওই গ্রামের কুন্দুড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষক তাপস চক্রবর্তী জানান, তিনি নিজের কিডনি জটিলতা এবং মেয়ের অসুস্থতার কারণে টাকার প্রয়োজনে গ্রাম্য মহাজন নাজমা বেগমের কাছ থেকে শতকরা মাসিক ১০ টাকা সুদে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ২০১০ সালে। পর্যায়ক্রমে তিনি শোধ করেছেন সাত লাখ ৬০ হাজার টাকা।
তিনি জানান প্রতি লাখে একটি করে খালি চেক এবং নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করে দেওয়া ছিল মহাজনের কাছে। মহাজন নাজমা বেগম এখন এই খালি চেকে ২৪ লাখ টাকা বসিয়ে আমার উপর চাপ দিচ্ছেন। এমনকি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন কোথায় পাবো ২৪ লাখ টাকা।
ওই গ্রামের বাবু লাল অধিকারীর স্ত্রী লতিকা অধিকারী জানান, তিনি দুটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন নাজমা বেগমের কাছ থেকে। দৈনিক এক হাজার টাকা সিাবে ৭৬ হাজার টাকা সুদ দিয়েছেন ৭৬ দিনে। ঋণের বিপরীতে কয়েক বছরে তিনি সাড়ে ৬ লাখ টাকা পরিশোধও করেছেন। এখন নাজমা বেগমের দাবি, তাকে আরও সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জেরে লতিকা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন নাজমা। রোজই তার বাড়িতে যেয়ে টাকার তাগিদ দিচ্ছেন। তার হুমকির মুখে তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। এমনকি ২ ফ্রেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় পরিক্ষায়ও সে যাতে যেতে না পারে সেই হুমকিও দিয়েছেন নাজমা ও তার স্বামী।
এদিকে একই গ্রামের তারক সরকারের স্ত্রী যমুনা সরকার জানান তার দুই ছেলে আশুতোষ ও শুকলাল সরকার ৬৫ হাজার টাকার ঋণ নিয়েছিলেন একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ভিত্তিতে । এই টাকা থেকে তিনি দফায় দফায় আড়াই লাখ ও দেড় লাখসহ চার লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এছাড়াও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে ১১ শতক জমি কোবালা দলিল করে নিয়েছেন মহাজন নাজমা।
এখন নাজমা এই দলিল ফেরত দিচ্ছেন না, উল্টো আরও দাবি করছেন সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে নাজমা দম্পতি তাদের আড়াই বিঘা জমির মাছ লুট করে নিয়েছেন।
আশাশুনির বড়দল আফতাব উদ্দিন কলেজিয়েট স্কুলের প্রভাষক দেবদত্ত চক্রবর্তী জানান, তিনি তিনটি খালি চেক এবং ৫০০ টাকার স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্পের বিনিময়ে দেড় লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ যাবত তিনি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। তা সত্ত্বেও এখনও তার কাছে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দাবি করে নাজমা বেগম তাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
একইভাবে ঋণের জালে আটকা পড়েছেন ওই এলাকার প্রেম সরকার, সুকুমার সোম, নেপাল সরকার, সনদ অধিকারী, গোবিন্দ সরকার, চাম্পাফুলের অনয় সরকারসহ অনেকেই।
অভিযোগ করে তারা বলেন আমরা ঋণের টাকারও অনেক বেশি সুদসহ দেনা পরিশোধ করেছি। তারপরও আমাদের উপর মহাজনী স্টিম রোলার চালাচ্ছে নাজমা ও স্বামী আব্দুর রশিদ।
তাদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার শর্ত হলো বেলা ডুববার আগেই সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। এখন বাড়ি-ঘর ছেড়ে আমরা নাজমার হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, নিরীহ ও দরিদ্র এসব পরিবারের উপর নাজমা ও রশিদ দম্পতির মহাজনী নির্যাতন চরমে উঠেছে। মহাজনরা তাদের গরু ছাগল ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তাদের ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে টাকা উশুল করে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান নাজমা বেগমের মহাজনী দাপট চরমে ওঠায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিয়ে আমি বৈঠক করেছি। উভয়পক্ষকে কিছুটা শর্ত দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার পরামর্শও দিয়েছি। এ ঘটনার পর থেকে মহাজন নাজমা বেগম পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, ঋণগ্রহীতা পরিবারের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহাজনী কারবার এবং ঋণের বেশি টাকা আদায় ও জমি দখল সম্পর্কে জানতে মহাজন নাজমা বেগমের ০১৭২২৩০৮৫৮৮ নম্বরে বারবার ফোন করেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার স্বামী আবদুর রশীদকেও পাওয়া যায়নি।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2024
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd