কালিগঞ্জ ব্যুরো: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালিগঞ্জ ইউনিটের কমান্ডার আলহাজ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুতে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ তিনদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারী তিনদিন ব্যাপী শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর অংশ হিসেবে দলীয় কার্যালয়, উপজেলা কার্যালয়সহ সকল ইউনিয়ন কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং সকল ইউপি চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাল ব্যাজ ধারণ ও শোকবইতে স্বাক্ষর। এছাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকেও তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মরহুমের বড় মেয়ে ওয়াহিদা সুলতানা শিউলী কানাডা থেকে ফেরার পর মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে বলে মরহুমের পরিবার পক্ষ হতে জানানো হয়েছে। এছাড়া সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত উপজেলা সোহরাওয়ার্দী পার্কে ওয়াহেদুজ্জামানের মৃতদেহ রাখা হবে। সেখানে দলীয় নেতা কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী শেখ ওয়াহেদুজ্জামান ১৯৫১ সালে উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজার গ্রাম রহিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ৯ম সেক্টরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্যাপ্টেন নুরুল হুদার নেতৃত্বে যুদ্ধকালীন কমান্ডার হিসেবে কালিগঞ্জের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কালিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ছিলেন। ১৯৮৪ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ওই পদে আন্তরিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি কালিগঞ্জ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
গত রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেখ ওয়াহেদুজ্জামান আকষ্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করার পর রাত ১১ টায় তার মৃতদেহ সাতক্ষীরা হিমঘরে রাখা হয়। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সুযোগ প্রদানের লক্ষে সোমবার বিকেলে মৃতদেহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাশবাহী গাড়িতে করে কালিগঞ্জে আনা হয়। আলহাজ্জ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামান এর পছন্দের স্থান হিসেবে মহৎপুর সরকারি কবরস্থানে নির্দিষ্ট স্থানে দাফনের জন্য একদিন আগেই কবর খনন সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুর আলহাজ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মেহদেী হাসান সুমন তার পিতার রূহের মাগফিরাত কামনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক,
শোক সন্তপ্ত পরিবারের পাশে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি
কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুতে রবিবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এসময় তিনি প্রবীন এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
এছাড়াও গভীর শোক জানিয়েছেন সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ আংশিক-শ্যামনগর) আসনের এমপি এসএম জগলুল হায়দার। শপথ গ্রহণ শেষে ঢাকায় অবস্থানকালে এমপি এসএম জগলুল হায়দার রবিবার সন্ধ্যায় আলহাজ্জ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে রাতেই তিনি কালিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সোমবার ভোরে তিনি কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের বাজারগ্রাম রহিমপুরে অবস্থিত শেখ ওয়াহেদুজ্জামান এর ‘কিছুক্ষণ’ নামক বাড়িতে যান। এসময় তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি মরহুমের বড় ছেলে কুশুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মেহেদী হাসানকে সান্ত¡না দেন এবং সুখে-দু:খে পরিবারটির পাশে থাকার আশ^াস প্রদান করেন।
এদিকে রবিবার রাতে আলহাজ্জ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুর খবর জানার পরপরই তার বাড়িতে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব নজরুল ইসলামসহ জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, ইউপি চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ মরহুমের বাসভবনে যেয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেন। উপজেলাবাসীর রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবে খ্যাত বর্ষিয়ান জননেতা আলহাজ্জ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের মৃত্যুকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে তারা আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
Leave a Reply