শামুকের পাটকেলঘাটার থেকে ছোট ও ডিমওয়ালা শামুক আহরণে হারিয়ে যাচ্ছে শামুক

বিশ্বজিৎ চক্রবর্তি ॥ পাটকেলঘাটার ছোট-বড় মিঠা পানির পুকুর, বিল, বাঁওড়, খাল, নদী, জলাশয়, জলাভূমিতে বিচরণ ছিল শামুকের। বর্তমানে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী শামুকের আবাসস্থল ধ্বংস, ছোট ও ডিমওয়ালা শামুক আহরণসহ বিভিন্ন কারণে এটি এখন বিলুপ্তির পথে। পানি পরিষ্কার রাখা ও জলাভূমির জীববৈচিত্র সুরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও টিকে থাকা নিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে শামুক। পাটকেলঘাটার কলেজ মোড়, মকসেদপুর স্কুল মোড়, কুমিরা, মির্জাপুর, দলুয়া, মৌলভী বাজারে এ অঞ্চলের শামুক কেনাবেচার সবচেয়ে বড় হাটগুলো বসত। এ বাজার গুলোয় বেচাকেনা চলে বছরের ভাদ্র থেকে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, নব্বইয়ের দশক থেকে জেলা সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে মাছের ঘের বাড়তে শুরু করে। একদিকে বাগদা চাষের জন্য লবণ পানি ব্যবহারের কারণে শামুকের সংখ্যা কমতে থাকে; অন্যদিকে চিংড়ির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয় শামুকের মাংস (গ্যাতা)। আবার শামুকের খোলস দিয়ে চুন, ঘেরের পানি পরিষ্কার করার পাউডার, পোল্ট্রি ফার্মে মুরগির খাদ্য ও মাছের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর ব্যাপক হারে ছোট ও ডিমওয়ালা শামুক আহরণ করা হচ্ছে। ফলে পাটকেলঘাটার অঞ্চলসহ উপজেলার জলাভূমি থেকে শামুক কমে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও শামুক কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া ও মিঠা পানির জলাশয়ে লবণাক্ততার প্রভাব পড়ায় শামুকের বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
পাটকেলঘাটার তৈলকুপি এলাকার ঘের মালিক অমিত কুমার সাধু বলেন, ঘেরে শামুক দেয়া হলে মাছ তাড়াতাড়ি বাড়ে, তাজা হয়। অল্প সময়ে বেশি লাভ করতে এ খাবার দেয়া হয়। পাটকেলঘাটা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ চক্রবর্তি বলেন, বিভিন্ন স্থানে সংঘবন্ধ ভাবে বিল, হাওড়-বাঁওড় থেকে শামুক কুড়িয়ে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে। ফড়িয়ারা বেপারির কাছে, বেপারিরা আড়তদারের কাছে এবং সবশেষে ঘের মালিকরা কিনে এনে এলাকার গরিব মানুষদের দিয়ে ভেঙ্গে নেয়। পরিবেশ নিয়ে ভাবার সময় কই তাদের! পাটকেলঘাটা বাজার এলাকায় শামুক ভাঙ্গার কাজ করেন হালিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘অভাবের জন্য এ কাজ করি। পরিবেশের কি হয়, তা জানি না। এক বস্তা শামুক ভেঙ্গে এর মাংস বের করে দিলে ১০০ টাকা দেয়। কুমিরা মহিলা কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শামুক মূলত মাটির ক্যালসিয়াম কার্বনেট বৃদ্ধি করে। মাটির গুণগত মান ঠিক রাখে ও পানি ফিল্টারিংয়ের কাজ করে। ফলে এটি কমে গেলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। মাটির অ্যাসিডিটি বেড়ে যাবে। ফলে ফসল উৎপাদন কমবে। শামুককে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বহু প্রাণী বেঁচে আছে। শামুক হারিয়ে গেলে খাদ্য শৃঙ্খলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কাটাখালি গ্রামের শামুক ব্যবসায়ী কিংকর মন্ডল ও মকসুদপুর গ্রামের সুবীর কুমার জানান, এভাবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে নির্বিচারে শামুক নিধন চলতে থাকলে কৃষিবান্ধব এই জলজ প্রাণী অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শামুক চাষ এখন সময়েরই দাবি। এর রয়েছে বানিজ্যিক উপযোগিতাও। শামুক চাষের মধ্য দিয়েও সৃষ্টি হতে পারে বহু কর্মসংস্থান, আসতে পারে কৃষি সাফল্য।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *