ডি এম আব্দুল্লাহ আল মামুনঃ বঙ্গোপসাগরের পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলের রাস উৎসব শেষ হল পুর্ণ স্নানের মধ্য দিয়ে। এবছর ২১, ২২ ও ২৩ নভেম্বর ২০১৮ তিন দিন ব্যাপী রাস পূর্নিমা উপলক্ষ্যে সুন্দরবনের দুবলার চরের (আলোর কোল) রাস উৎসব ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়। দুবলার চরের এই রাস উৎসব প্রায় ২০০ বছরের পুরানো একটি ঐতিহ্য। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনব্যাপী এই উৎসবকে ঘিরে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে।
সুন্দরবনের আলোরকোলের এই রাস উৎসব নিয়ে কথিত আছে, ১৯২৩ সালে ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু এই মেলা শুরু করেছিলেন। তিনি চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে অলৌকিক জীবন-যাপন করতেন। অন্য একটি মতে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগের কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন এবং পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান।। সেই থেকে শুরু হয় রাসমেলার। আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষ্যেই দুবলার চরে পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব। আবার আব্দুল জলিলের সুন্দরবনের ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দি গ্রামের জনৈক হরিচাঁদ ঠাকুর স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পূজা পার্বণাদি ও অনুষ্ঠান শুরু করেন দুবলার চরে গিয়ে। তারপর থেকে মেলা বসছে। সবশেষে মুক্তিযোদ্ধা মেজর অব জিয়াউর রহমান এই রাস উৎসবকে পুর্নাঙ্গভাবে ও বৃহৎ পরিসরে আয়োজন করেন। বনের ভেতরের আটটি পথ দিয়ে মেলায় এসেছে বিভিন্ন ধর্মের উৎসুক লোকজন। এই রাস মেলাকে ঘিরে গোটা সুন্দরবনে নেওয়া হয়েছে নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুবলার চরের রাস মেলার রুপকার মুক্তিযোদ্ধা মেজর অব জিয়াউর রহমানের জীবনী নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শণী করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাস উৎসব। পরের দিন(২২ নভেম্বর) শ্রী কৃষ্ণের রাসলীলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়।
যাত্রাপথে কেউ যেন সুন্দরবনে লাউডস্পিকার না বাজায়, নদীতে পলিথিন বা অন্যান্য বর্জ্য ও তেল জাতীয় দ্রব্যাদি ফেলা থেকে বিরত থাকে সেজন্য দর্শার্থীদের সচেতন করার লক্ষ্যে সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটি জনসচেতনতমূলক একটি ক্যাম্পেইন করেন। রাস উৎসব সম্পর্কে বারসিক কর্মকর্তা মননজয় মন্ডল বলেন,“ সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস উৎসবে কয়েক লক্ষ দেশী বিদেশী পর্যটকের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে। পবিত্র এই আলোর কোলের বুকে বঙ্গপসাগরের লোনা পানিতে পুন¯œানের মাধ্যমে পাপ মোচনে মেতে ওঠে নারী পুরুষ সকলেই। তিনি আরো বলেন আমাদের সকলের সচেতনতা আন্তরিকতায় উৎসবটি টিকে থাকবে হাজার বছর সুরক্ষিত থাকবে আমাদের সুন্দরবনের বৈচিত্র্য।”
আলোর কোল দ্বীপেই বসে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় উৎসব রাসমেলা। প্রতি বছর কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় এ মেলা। প্রতি বছর তিন দিনব্যাপী উদযাপিত হয়। এ মেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ আকর্ষণীয়। মেলা শেষ হয় শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে।
Leave a Reply