নির্বাচনী ইশতেহারে পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনাকে সংযুক্ত করতে হবে

নিজস্ব প্রতিনিধি: উপকূলীয় অঞ্চলে পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে ঘরে-ঘরে সুপেয় পানির দাবিতে সাতক্ষীরায় সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা ফোরাম’ শনিবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই জাতীয় চার নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা’কে সংযুক্তি এবং পরবর্তিতে সরকারি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিতে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যাবস্থাপনা ফোরাম’র সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) অভীষ্ট-৬, ‘সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়:নিষ্কাশণের টেকসই ব্যাবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ’-এর জন্য বাংলাদেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও ওয়াশ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে পথ চলার এখনও অনেক বাকী’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৯৭ ভাগ মানুষের পানিতে অভিগম্যতা থাকলেও লবণাক্ততা, আর্সেনিক ও আঞ্চলিক দূর্গমতা বিবেচনায় সুপেয় নিরাপদ পানিতে ৬০ ভাগ মানুষের অভিগম্যতা নাই।’
তিনি দেশের স্যানিটেশন সেবার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘খোল স্থানে মলত্যাগের হার শূণ্যের ঘরে এনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপি প্রশংসিত হয়েছে তবে নিরাপদ ও টেকসই স্যানিটেশন সেবার আওতায় এসেছে মাত্র ৪৭ ভাগ। এ প্রেক্ষাপটে স্যানেটিশন ব্যাবস্থাপনার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গিকার এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এজন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গিকার প্রত্যাশা করে।

সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহারে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতকে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সাত দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ঘরে ঘরে সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণ। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা ও আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ। সরকারি পুকুর, খাল ও জলাধার উদ্ধার করে মিষ্টি পানির আধারে পরিণত করা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা। পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সকল প্রতিষ্ঠানে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করা। দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ এলাকা এবং শহরের বস্তি ও নিন্ম আয়ের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ সকলের জন্য ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি। জলাভূমি রক্ষা করে যে কোন উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা, পানি ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে নতুন স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি পুরাতন স্থাপনাগুলোকে সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে সচল রাখার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম, প্রথম আলোর প্রতিনিধি কল্যাণ ব্যাণার্জি, নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল বারী, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক ফাহিমুল হক কিসলু, সুশীলনের উপ-পরিচালক মোস্তফা আখতারুজ্জামান, ‘ঐতিহ্য : উপকূলীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফোরাম’ সাধারণ সম্পাদক মিসেস চন্দ্রিকা ব্যাণার্জি, আশ্রয় ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মমতাজ খাতুন প্রমুখ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *