রাসেদ, রাফিয়াকে কল করে বলল, “তুমি আমাকে এই ভাবে ধোকা দিলে কেন? রাফিয়া, তুমি আমার সাথে এভাবে প্রেমের অভিনয় না করলেও পারতা?”
রাফিয়া নরম গলায় জবাব দিল,”কিভাবে ধোকা দিলাম তোমাকে?কেন তুমি কি অন্য কোন ভাবে ধোকা পেতে চেয়েছিলে নাকি?”
রাসেদ কন্ঠস্বর একটু নামিয়ে বলল, “তুমি আমাকে বলো নাই কেন, তুমি বিবাহিত? তোমার একটা মেয়েও আছে নাকি শুনলাম। কি যেন নাম? তুলনা না ভুলনা কি একটা হবে। ’
রাফিয়া একটু রেগে গিয়ে বলল, “কে বলল, এসব বানোয়াট কথা? সব মিথ্যা”।
রাসেদ বলল, “কে আর বলবে?তোমার আম্মু। অন্য কেউ বললে ত বিশ্বাস করতাম না”।
রাফিয়া হিঁ হিঁ হিঁ করে হেঁসে দিয়ে বলল, “তুমি জানো না আমার আম্মুর ব্রেনের সমস্যা আছে?”
রাসেদ বলল, “কই তুমি আগে বলো নাই তো। ঐ দিন না বললে, আমার আম্মু গুনবতী। আর কি কি যেন বলেছিলে, তেমন মনে নাই। আসলে সকালে ঠান্ডা ভাত খাইতো সেজন্য সব কথা তেমন মনে থাকে না। “
রাফিয়া মুখ বেকিয়ে হেঁসে বলল, “তুমি যানও না,পাগলকে সামনা-সামনি পাগল বললে, পাগল রেগে গিয়ে উল্টা পাল্টা কাজ করে বসেন?”
রাসেদ নিজেকে বোকা বানিয়ে বলল, “হ্যাঁ জানি। “
রাফিয়া রেগে গিয়ে কলটা কেটে দিল। অপর পাশ থেকে রাসেদ তখনও হ্যালো হ্যালো বলতে থাকে।
আজ শুক্রবার। কলেজ বন্ধ থাকায় রাসেদ, একটা নীল রঙের পাঞ্জাবী পরে রাফিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে বের হল। সে একটা সিএনজি ভাড়া করে রাফিয়াদের গেটের সামনে নামল। সিএনজি চালককে ভাড়া না দিয়ে চলে যাচ্ছিল রাসেদ। সিএনজি চালক রাসেদকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ভাই, ভারার টাহা না দিয়া চৈলা যান ক্যান। “
রাসেদ পুরোনো একটা বিশ টাকার নোট সিএনজি চালককে দিয়ে বলেন, “ভাড়ার টাকা দিছি কিনা খেয়াল ছিল না, ভাই।”
রাসেদ ধীরে ধীরে হেঁটে রাফিয়াদের ডাইনিং এর দরজার সামনে গিয়ে ভেতরে দেখতে লাগল। সে এবার যেটা দেখল, সেটা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে দেখল, তুলনা নামের সাড়ে তিন বছরের মেয়েটা আম্মু ডাকায়, রাফিয়া তাকে তুমুল বকাঝকা করছে। এ অবস্থায় রাফিয়ার আম্মু এসে রাফিয়াকে বলল, ‘তোর গর্ভে জন্ম নিল, আর তুই কিনা ওকে আম্মু ডাকার অপরাধে বকছিস। তুই আসলে কি যে নিষ্ঠুর। তুই মা নামের কলঙ্ক।’
এসব কান্ড রাসেদ ডাইনিং এর বাইরে দাঁড়িয়ে দেখে, তার কলেজের হলে চলে আসল।
রুমমেট রুমে না থাকায় রাসেদ একাকী ভাবতে লাগল। আমি অন্য যেদিন রাফিয়াদের বাসায় যাই, সেদিন বাচ্চাটা রাফিয়াকে আপি বলে ডাকে। আজ আমার অনুপস্থিতিতে আম্মু বলে ডাকল। রাফিয়া কি আমার থেকে টাকা নেওয়ার জন্য ভেলকি বাজি করছে। নাকি ওর পরিবারের সবাই পাগল। ধ্যাৎ এমন ভাবা ঠিক নয়। আমিও ত ভুল শুনতে পারি। নাকি ইদানিং রাত জেগে জেগে আমার ব্রেনের সমস্যা হয়েছে।
সন্ধ্যাবেলা রাফিয়া রাশেদের কাছে কল দিল। রাসেদ দ্বিতীয়বারে কলটা রিসিভ করল। রাফিয়া অপরাধীর সুরে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে তুলনা আমার মেয়ে। আমার স্বামী এলএলএম পাশ করেও কোন কাজ পায় না। তাই আমি নিজের পড়ার খরচ নেওয়ার জন্য তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছি। তৌফিক বলেছে ও কোথায় নাকি শীঘ্র সহকারী আইনজীবি পদে নিয়োগ পাবে। তারপর তোমার সব টাকা আমি শোধ করে দিব। “
রাসেদ বলল, “শোন পাগলীর কথা। তুমি বিপাকে পড়ে আমার থেকে টাকা নিয়েছ। ওই টাকা আমাকে শোধ দিতে হবে না। “
এরপর রাফিয়ার কান্নার শব্দ শোনা গেল। তারপর কলটা কেটে গেল।
পরদিন সকালবেলা রাসেদ তার পরিচিত শহর ছেড়ে বহুদূরে চলে যাবার জন্য বের হল। সে তার মোবাইলের ব্যাকপার্ট খুলে সিম দুটো বের করে একটা নদীতে ফেলে দিল। সে চায় না, তার সাথে রাফিয়ার আর কোন দিন দেখা হোক কিংবা কথা হোক। তবে রাসেদ মন থেকে কামনা করে, রাফিয়া তার স্বামীকে নিয়ে সুখে থাকুক। সে রাফিয়াকে ভুলে থাকতে চায়। কারণ সে রাফিয়াকে ভেবে নেশাগ্রস্থ হতে চায় না। সেজন্য সে প্রকৃতির মুক্ত আবহাওয়ার স্বাদ নিতে হাঁটতে থাকল নদীর পাড় দিয়ে।
Leave a Reply