ভারত থেকে আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যের পরিমাপ (ওজন) করা নিয়ে কাস্টমস ও বিজিবি‘র মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় রোববার দুপুর থেকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে বন্দরের দু‘দেশের উভয় পাশে শত শত ট্রাক পণ্য নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে রফতানিকৃত পোষাক শিল্পের উপকরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কেমিকেল ও কাঁচামাল রয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে ভারত থেকে মাত্র ৩০ গাড়ি আমদানি পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশের পর চেকপোস্ট কাস্টমস ও সিএন্ডএফ কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায় বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। স্বাধীনতার পর থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যে সকল পণ্য ভারত থেকে আমদানি-রফতানি হয় চেকপোস্টে তার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমসের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও রোববার সকাল থেকে ওইসব পণ্যের ওজন তদারকি করার জন্য চেকপোস্টে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এর ফলে কাস্টমসের কাজে বিজিবি‘র হস্তক্ষেপে কাস্টমস তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বিজিবি বলছে, মন্ত্রনালয় থেকে আমদানি পণ্যের ওজন করার জন্য চেকপোস্ট ও টিটিআই গেটে কাস্টমসের পাশাপাশি দেখার দায়িত্ব নিলে কাস্টমস তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। অপর দিকে কাস্টমস বলছে, রাজস্ব সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমসের তদারকি করার কথা। আর বিজিবির সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানি পণ্য নিয়ন্ত্রনের কথা থাকলেও বিজিবি আমদানি পণ্য দেখাশুনার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা কাজ বন্ধ করে দিলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোল শত শত গাড়ি আমদানি পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যদি সময় মত গাড়ি বন্দরে প্রবেশ করতে না পারে তবে ট্রাক প্রতি ২/৩ হাজার টাকা প্রতিদিন ডেমারেজ দিতে হবে। তাছাড়া রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পচনশীল পণ্যের ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, ফল, পেঁয়াজ, মাছসহ নানা ধরনের পচনশীল পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অপেক্ষা করছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত বিষয়ে একমাত্র জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর মধ্যে বিজিবি‘র হস্তক্ষেপ সাংঘষিক। এ ঘটনার ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। সুষ্ঠু সমাধান না হলে ব্যবসায়ীরা এ পথে আমদানি-রফতানি করবে না বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্ণেল আরিফুল হক বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাপ নির্ধারনের করার জন্য চেকপোস্টে স্থাপিত কাস্টমসের উইনিং স্কেলে বিজিবি সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত পণ্য আমদানি হচ্ছে বলেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরকার সঠিক রাজস্ব পাবে। আমরা কাস্টমসের কোন কাজে হস্তক্ষেপ করছি না।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপারেন্টেন্ড) হারুনর রশিদ বলেন, আমদানি- রফতানি বাণিজ্যে বিজিবির তদারকির বিষয়ে কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তারা অফিস বন্ধ রেখেছেন।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন জানান, আমদানি-রফতানি ও রাজস্ব আদায় নিয়ন্ত্রণ করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর থেকে বিজিবি‘কে এমন কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তারপরও তারা চেকপোস্ট কাস্টমসের উইনিং স্কেলে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাপের দায়িত্ব পালন করছেন। এর প্রতিবাদে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেস্টা চলছে।
Leave a Reply