নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের খেয়াঘাট ইজারার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়েরকৃত অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এ তদন্ত করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক উপ-সচীব হোসেন আলী খন্দকার।
বাস্তবতার আলোকে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমান ও সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয়টি দালিলিক আকারে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সত্যরঞ্জন মন্ডল।
অভিযোগ উপন্থাপনকালে এ্যাডভোকেট সত্যরঞ্জন মন্ডল বলেন, জেলা পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলা ১৪১৫ সাল থেকে ১৪২৪ সাল পর্যন্ত আশাশুনির ঘোলা-হিজলা-কল্যাণপুর খেয়াঘাটের ১০ বছরের মোট ইজারা মূল্য ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫১০ টাকা দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা ১৪১৮ সালে একইভাবে হাজরাখালি-বিছট খেয়াঘাটের ১০ বছরের ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫ টাকা।
বাংলা ১৪১৮ ও ১৪১৯ সালে ওই খেয়াঘাট বাবাদ গ্রহণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৫২৮ টাকা। ওই দু’টি খেয়াঘাট ইজারা নেন আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা শাকিল। একইভাবে ইজারা নেওয়ার কিছুদিন পর খেয়াঘাটের শ্রেণী পরিবর্তণ করার অভিযোগে কেন তার ইজারা বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমান নোটিশ করেন। এরই বিরুদ্ধে তিনি মহামান্য হাইকোর্টে দু’টি খেয়াঘাটের বিপরীতে ২০১২ সালের ২ জানুয়ারি ২৫/১২ রিট পিটিশন দাখিল করেন।
রিট পিটিশনে ঘোলা- হিজলা- কল্যাণপুর খেয়াঘাট বাবদ বাংলা ১৪১৮ ও ১৪১৯ সালে ১২ লাখ ৪০০ টাকা ইজারা গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে ১৪১৮ সালের ইজারা মূল্য বাবদ তিন লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকা ছাড়াও ভ্যাট, আয়কর ও ১% প্রিমিয়াম বাবদ ৭৩ হাজার ৫৮৪ টাকা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমান ২০১১ সালের ২৬ জুন রশিদ বই এর মাধ্যমে গ্রহণ করেন। একই তারিখে হাজরাখালি বিছট খেয়াঘাটে বাংলা ১৪১৮ ও ১৪১৯ সালে ১০ লাখ ৫২৮ টাকার ইজারা গ্রহণ করার পর ১৪১৮ সাল বাবদ দু’ লাখ ২০ হাজার টাকা গ্রহণ ছাড়াও ভ্যাট, আয়কর ও ১% প্রিমিয়াম বাবদ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা রশিদের মাধ্যমে গ্রহণ দেখানো হয়েছে। যেখানে আত্মসাতের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
ঘোলা- হিজলা-কল্যাণপুর খেয়াঘাটের ১৪১৯ সালের ইজারামূল্য ইজারাদার আবু হেনা শাকিল পরিশোধ করেছেন। কিন্তু তিনি ওই বছর ভ্যাট বাবদ ৫২,৫৬০ টাকা পরিশোধ করেন নাই।
সেক্ষেত্রে ঘোলা- হিজলা ও কল্যাণপুর খেয়াঘাট থেকে দু’ বছরে দু’ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেখানোয় ইজারা মূল্য ৯ লাখ ২০ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
একইভাবে মানিকখালি খেয়াঘাটটি ১০ বছরে ২৫ লাখ ৩১২ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা গ্রহীতা কওছার আলী কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে ২২৭৯/২০০৫ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন। ফলে ওই খেয়াঘাটে আদায়কৃত রাজস্ব যথাযথভাবে জেলা পরিষদ পাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ইজারা নোটিশের শর্তাবলীতে সর্বোচ্চ বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত যে কোন কোটেশনে উদ্ধৃত দর অনুমোদনের পর নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ১৪১৮ সালের ইজারা মূল্য বাবদ অবশিষ্ঠ ৫০ শতাংশ ইজারা মূল্যসহ ৫শতাংশ আয়কর, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১ শতাংশ প্রিমিয়াম এককালিন জেলা পরিষদে জমা দিতে হবে। ব্যর্থতায় ইজারা চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা তা না করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ইজারা চুক্তি করেছেন।
অভিযোগ শুনানীকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের ১৫জন সদস্য, কয়েকজন কর্মচারি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানসহ সাংবাদিকরা। শুনানীকালে জেলা পরিষদ সদস্যরা এসএম মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানা পরিচালনা, এইচএসসি পাশ করে তার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ অবৈধ ও তিন বার বদলী করার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন খারিজ হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে সাতক্ষীরায় চাকুরি করা সংক্রান্ত বিষয়গুলি যথাযথভাবে উপস্থাপন করার পরও একই তদন্তকারি কর্মকর্তা অভিযোগের সত্যতা মেলেনি বলে প্রতিবেদন দেওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একইভাবে মন্ত্রণালয় চিঠি দেওয়ার পরও তাকে বদলী ও এক বছর ছুটি নেওয়ার আইনি বৈধতা সংক্রান্ত তদন্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা হল থেকে বেরিয়ে যান।
Leave a Reply