ঢাকা ব্যুরো : স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দাঁড়িয়ে যখন জাতির জনককে আঘাত করা হয়, তখন এ দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গায় আঘাত করা হয়, দেশের মানুষের প্রতিটি ধমনীতে আঘাত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ডুটা) বিন্দুমাত্র ছাড় দিবে না।
বুধবার বেলা বারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ডুটা) এ এস এম মাকসুদ কামাল এ সব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়।
গত ১৯ জুলাই নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের এক সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। শিক্ষক সমিতি ওই শিক্ষকের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে তারা অধ্যাপক আকমল হোসেনের বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। এর জবাবে অধ্যাপক আকমল হোসেন প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার বক্তব্যের ব্যাখা দেন।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা আশঙ্কা করেছি কোটা আন্দোলন এ দেশের ছাত্রদের অধিকারের আন্দোলন নয়। কোটা আন্দোলন হলো নির্বাচনের বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতা নেওয়া যায় তার আন্দোলন। এ আশঙ্কা আমরা সেদিন থেকে করেছিলাম। আর সেদিনকার হাততালি থেকে সে আশঙ্কা প্রমাণিত হলো।
তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের ভেতর জামায়াত-বিএনপি ঢুকেছে। আয়োজকরা অধ্যাপক আকমলের বক্তব্যের পরে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া করেনি। অধ্যাপক আকমল হোসেন যে অপরাধে অপরাধী আয়োজকরাও একই অপরাধে অপরাধী। আয়োজকরা তাদের বসিয়ে রেখে হাত তালি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এই হাততালি ছাত্র শিবির বিএনপি-ছাত্রদলের হাততালি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি তিনি কটূক্তিকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নিঃশর্ত ক্ষমা যদি চান এবং যদি বলেন ভবিষ্যতে আর এই ধরনের কথা বলবেন না তাহলে শিক্ষক সমিতি বিবেচনা করে দেখবে ভবিষ্যতে কোনো কর্মসূচি দিবে কিনা।
৩৭ বছর শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক আকমল হোসেন কি পড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সেটা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে মাকসুদ কামাল বলেন, অধ্যাপক আকমল ৩৭ বছর শ্রেণিকক্ষে পড়িয়েছেন। তিনি কি ৩৭ বছর এই বিষয়গুলো পড়িয়েছেন? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তিনি ৩৭ বছর শ্রেণিকক্ষে বিভ্রান্তকর তথ্য পড়িয়েছেন সেটিও খতিয়ে দেখার বিষয় আজকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলব ৩৭ বছর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে বাংলাদেশের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে তিনি কি পড়িয়েছেন, সেখানে সিলেবাস কি আছে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে বসে বসে মুক্তিযুদ্ধের সমালোচনা করছিল অভিযোগ করে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা বলছিল, ভোটের বাক্সে লাথি মার বাংলাদেশ কায়েম কর। একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সৃষ্টি করার যে পথ বঙ্গবন্ধু উন্মোচন করতে চাচ্ছিলেন সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা তারা তখন করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বলেছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ হলো দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি; সুতরাং আমরা এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করব না।’ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে তারা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ দাঁড়িয়ে বলে ‘তার পিতা কি মুক্তিযুদ্ধ করেছে?।’ এই অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি চুপ থাকতে পারে না। আমরা বিবৃতিতে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছি। সহকর্মীরা আইনের মাধ্যমে জিনিসটির সুরাহার কথা বলেছেন। আমরা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিব আলোচনা করে।
অধ্যাপক মাকসদু কামাল বলেন, ২০০২ সালের ৮ জানুয়ারি মতিউর রহমান নিজামী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিল মুক্তিযুদ্ধ কোটা বাতিল হবে। ২০০৩ সালে দেলওয়ার হোসেন সাঈদি বলেছিল মুক্তিযুদ্ধ কোটা বাদ দিতে হবে। তারা যে বক্তব্য রেখেছে সেই বিষয় নিয়ে আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত তরুণরা যখন মাঠে নেমেছে শিক্ষক সমিতি তখন যুগের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সংহতি প্রকাশ করেছে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কোটা আন্দোলনে যদি কোনো বাধা আসে প্রতিরোধ করতে হবে। যখন আজ লন্ডন থেকে কিভাবে কোটা আন্দোলনকে উসকে দিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যায়। তখন কোটা আন্দোলন কোন দিকে সেটা বোঝার আমাদের অবকাশ নাই। তিনি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে কেউ যেন কোনো উসকানিতে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা না করেন তার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই ক্যাম্পাস হলো এই জাতির বিবেক। এখানে দাঁড়িয়ে এমন কিছু হবে না যাতে আমাদের মস্তক অবনত হয়ে যায়।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে এই সময়ে এই ধরনের বক্তব্য রাখার কেউ সাহস দেখায়, তাহলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এই অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে আমরা যাব না। আমাদের দেশ উন্নত হচ্ছে সেখানে যেন কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, পিছিয়ে নিয়ে যেতে না পারে এবং বিভিন্নভাবে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করতে পারে তার ব্যাপারে শিক্ষকমণ্ডলী সচেষ্ট থাকবে।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইয়া, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক আ জ ম শফিউল আলম ভুঁইয়া, সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মু. আব্দুর রশীদ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন প্রমুখ।
Leave a Reply