নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় বেগুনে ব্যাপক পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা। হাজার হাজার টাকার কিটনাশক ব্যবহার করেও মিলছে না প্রতিকার। ফলে এই সবজটি চাষ কওে লোকসানে পড়েছেন জেলার অধিকাংশ কৃষক।
চাষিদের অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন এলাকার বেগুন ক্ষেত পোকার আক্রামনে নষ্ট হয়ে গেলেও কোনো কৃষি কর্মকর্তাকে মাঠে পাওয়া যায়না পরামর্শ দেয়ার জন্য। ফলে কৃষকরা না বুঝে নানা ধরনের কিটনাশক ব্যবহার করে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছেন। না বুঝে কিটনাশক ব্যাবহার করে যেমন মিলছে না কোন প্রতিকার তেমনি এসব কিটনাশক কিনতে খরচও হচ্ছে বেশ।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের বেগুন চাষি জয়নুল আবেদিন জানান, ৩০ থেকে ৩৫ বছর যাবৎ অন্যান্য সবজি’র পাশাপাশি বেগুন চাষ করে আসছেন। চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। কিন্তু ইতিপূর্বে কখনো এতো পোকার আক্রমন দেখেননি তিনি।
তিনি বলেন, ‘গাছে একেকটি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম ওজন হওয়ার পর থেকে পোকায় তা ছিদ্র করে ঝাঝরা করে দিচ্ছে। তাছাড়া ডোগাও কেটে দিচ্ছে পোকায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে ৩ বিঘা জমিতে ৯০ হাজার টাকার ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে মিমপ্রেক্স কোম্পানীর মানিক, সুরেশ, সেতারা, পাইন, নীল এবং ওয়ান্ডার।’
তিনি জানান, ৩ বিঘা জমির বেগুন চাষে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বেচা-কেনা হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যে বেগুন বাজারে প্রতি মন ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন পোকার কারণে তা মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমির বেগুন চাষে প্রায় ১ লাখ টাকা লোকসান হবে বলে আশংক্সক্ষা করছেন তিনি।
একই গ্রামের চাষি পিন্টু দাশ জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। কিন্ত ক্ষেতের অধিকাংশ বেগুন হলদে রং হয়ে পচেঁ যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এরমধ্যে কিটনাশকেই খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তার পরও কোনো প্রতিকার পায়নি।’
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় বেগুন চাষ হয়েছে ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৮০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১৮৫ হেক্টর, তালায় ১৪৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২৫০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলাতে ২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় মাকড়া, নয়ন কাজল, বারি-৩, বারি-৪, ঝুরি ও অন্যান্য স্থানীয় জাতের বেগুন চাষ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বেগুনের পোকা আসলে কিটনাশক বা অন্যান্য ওষুধ দিয়ে দমন হয় না। বেগুনের পোকা মারার একমাত্র উপায় হচ্ছে সেক্সফ্রোমন ফাঁদ। কৃষকরা বেগুন ক্ষেতে এই ফাঁদ বসালে দু‘একদিনের মধ্যে পোকা দমন হয়ে যায়। কিন্ত এই ফাঁদের প্রচলন সাতক্ষীরাতে এখনো সেই ভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। তাই কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এই ফাঁদ ব্যবহারের জন্য।’
Leave a Reply