নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের অফিস সহকারী (ষাঁট লিপিকার) এ.কে.এম শাহিদুজ্জামানকে ঘুষের এক লাখ টাকাসহ আটক করেছে দুদক। মঙ্গলবার সকালে জেলা পরিষদের অফিস কক্ষে তাকে উক্ত টাকাসহ আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় দুদকের পরিচালক ড. আবুল হাছান জানান, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রকল্প ছাড়করণে ঘুষ লেনদেনের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুদকের একটি টিম আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে ওৎ পেতে ছিলেন। এক পর্যায়ে সদর উপজেলার দেবনগর রোকেয়া মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা বাড়ানোর জন্য উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসানের কাছ থেকে জেলা পরিষদের ষাঁট লিপিকার শাহিদুজ্জামান একলাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। ঘুষ গ্রহণকালে দুদকের টিম তাকে হাতেনাতে আটক করে। তিনি আরো জানান, আটক শাহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় সোপার্দ করা হয়েছে। মামলা নং-২৫। পুলিশ গ্রেফতারকৃত সাহিদুজ্জামানকে বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে।
এদিকে, এ ঘটনাকে সাজানো নাটক দাবি করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রুপিংয়ের কারণে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন সাঁটলিপিকার শাহিদুজ্জামান। যার কারণে খ-িত ছুটিতে থাকা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবর রহমানের ছেলে মেহেদি হাসান ও তার নিকট আত্মীয় ধুলিহার এলাকার হাসান হাদীর সহায়তায় দুদক এই অভিযান পরিচলনা করে। গাড়িতে থানায় নেয়ার আগে মেহেদি হাসান ও হাসান হাদী শাহিদুজ্জামানকে মারপিট করে। উক্ত অভিযানের সময় জেলা পরিষদের কোন সদস্য সাহিদুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করতে দেখেননি। এমনকি টাকা দেখতে চাইলেও সেই মূহুর্ত্বে তারা দেখাতে পারেননি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাঁটলিপিকার শাহিদুজ্জামান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবর রহমানের ষড়যন্ত্রের শিকার। সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে দুদক কর্মকর্তাদের দিয়ে তাকে ফাসিয়ে দেয়া হয়েছে। কথিত ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত শাহিদুজ্জামান জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাঁটলিপিকার। গত কিছুদিন যাবৎ প্রধান নির্বাহীর পদটি শুন্য থাকায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক উক্ত পদে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে শুধুমাত্র বেতন ভাতা ছাড়া অন্য কোন বিলে স্বাক্ষর করেন না। তাছাড়া বর্তমানে জেলা পরিষদের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকা- চেয়ারম্যান ও নির্বাচিত সদস্যদের মাধ্যমেই বরাদ্দ হয়ে থাকে। ফলে কোন কর্মচারীর পক্ষে কোন ধরনের বৈধ-অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। এছাড়া জেলা পরিষদের বরাদ্দের তালিকায় দেবনগর রোকেয়া মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের নাম নেই।’
জেলা পরিষদ ভাইসচেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুদক দাবী করছে এ.কে.এম শাহিদুজ্জামানের কাছ থেকে ঘুষের ১লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। অথচ আমরা ঘুষের সে টাকা দেখতে চাইলে দুদক আমাদেরকে কোন টাকাই দেখাতে পারেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিথ্যা হয়রানী করে জেলা পরিষদের কর্মী আটক করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও সুষ্টু বিচার দাবী করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সাঁটলিপিকার এ.কে.এম. শাহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার পূর্বক তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু, সদস্য আল ফেরদৌস আলফা, মো. আব্দুল হাকিম, মহিতুর ইসলাম, কাজি নজরুল ইসলাম হিল্লোল, মনিরুল ইসলাম, মাহফুজা সুলতানা রুবি, রোজিনা পারভীন প্রমূখ।
এব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ছুটিতে আছি আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না।’
Leave a Reply