আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালে মুখোমুখি হয়েছিল। সেবার জিতেছিল আর্জেন্টিনাই। কিন্তু সেই ফলাফলের পুনরাবৃত্তি যে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে হবে না তা কি ভেবেছিলেন হোর্হে সাম্পাওলির শিষ্যরা? নিজনি নভগোরোদে এদিন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট দলটি। শেষ ষোলর আশা বাঁচিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই। তবে এমন ম্যাচেই আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে হেরে গেছে ক্রোয়েশিয়ার কাছে। এই জয়ে দলটি নিশ্চিত করেছে শেষ ষোল। ১৯৯৮ সালে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম গ্রুপপর্বের বাধা পেরিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। এদিন ক্রোয়েশিয়ার হয়ে গোল তিনটি করেছেন আনতে রাবিচ, অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ ও ইভান রাকিতিচ। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের পর গ্রুপপর্বে এটাই আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় হার। দলটির শেষ ষোলর স্বপ্ন এখন সুঁতোর উপর ঝুলছে।
যুগোস্লাভিয়ার কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া। সেবার জাদুকরী স্ট্রাইকার ডেভর সুকারের নৈপুণ্যে সেমি ফাইনালে খেলেছিল দলটি। সেখানে হারলেও তৃতীয় হয়ে দেশে ফিরেছিল ক্রোয়াটরা।
সেই বিশ্বকাপের পর আর গ্রুপপর্বের বাধা পেরোতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। তবে ২০ বছর পর রাশিয়ায় এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলেছে দলটি। প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই তারা এবার নিশ্চিত করে ফেলেছে শেষ ষোল। সুকারের মত স্ট্রাইকার এবার দলে নেই। তবে সে অভাব পূরণ করছেন অধিনায়ক মদ্রিচ। দুই ম্যাচেই একটি করে গোল পেয়েছেন তিনি। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের ৮০ মিনিটে করা তার গোলটি ছিল চোখের জন্য শান্তিদায়ক।
এবারের বিশ্বকাপের মূলপর্বে আসতেই দারুণ হ্যাপা পোহাতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। আর এখানে এসে তাদের শেষ ষোলর ভাগ্য এখন ঝুলছে সুঁতোর উপর। গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে তাদের জিততেই হবে। সাথে তাকিয়ে থাকতে হবে আইসল্যান্ড-নাইজেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ডের ম্যাচের দিকেও। সর্বশেষ ২০০২ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব পেরোতে পারেনি দুইবারের বিশ্বসেরা এই দলটি।
অথচ ম্যাচের শুরুটা দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছিল। তেমনটা হয়েছিলও। কিন্তু ম্যাচের ফলাফলটি হয়েছে পুরো একপেশে।
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে গোলের প্রথম সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। দলটির মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচের নিচু শট লাফিয়ে আঙুল ব্যবহার করে বাইরে পাঠিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরো।
দশম মিনিটে আর্জেন্টিনার ডিবক্সে ক্রোয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড আনতে রেবিচকে দারুণ একটি পাস দিয়েছিলেন মদ্রিচ। তবে আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার তালিফিকো আক্রমণের সেই প্রচেষ্টা রুখে দেন।
ম্যাচে গোল করার সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিল আর্জেন্টিনাই। ম্যাচের ৩০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার ডিবক্সে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় বল পান আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার এনজো পেরেজ। এসময় প্রতিপক্ষের গোলপোস্টও ছিল পুরো ফাঁকা। তবে পোস্টের বাইরে শট নিয়ে সহজতম সুযোগ নষ্ট করেন তিনি।
এর তিন মিনিট পর ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচ একটি সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার ডিবক্সে পাওয়া ক্রস থেকে তিনি হেড করেন। তবে বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
ইনজুরি সময়ে মদ্রিচের দুর্দান্ত থ্রু পাস থেকে একেবারে ফাঁকায় বল পান রেবিচ। তবে দুর্বল ফিনিশিংয়ে রেবিচ দলের জন্য কোন সুযোগই সৃষ্টি করতে পারেননি।
ম্যাচের ৫৩ মিনিটে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার মারকাদো ব্যাক পাস দেন গোলরক্ষক কাবায়েরোকে। তিনি চিপ করে বলটি আরেক সতীর্থ ডিফেন্ডারকে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন। সেই ভুলকে কাজে লাগান রেবিচ। দারুণ এক ভলিতে এই ফরোয়ার্ড আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ান।
ম্যাচের ৬৪ মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ক্রোয়েশিয়ার গোলপোস্টের পাশের জটলা থেকে শট নিয়েছিলেন সুপারস্টার মেসি। কিন্তু তার বার্সেলোন সতীর্থ ইভান রাকিতিচ পা দিয়ে দারুণ দক্ষতায় বলটি আটকে গোলবঞ্চিত করেন আর্জেন্টিনা ও মেসিকে।
এরপর ম্যাচের ৮০ মিনিটে সেই জাদুকরী মুহূর্ত। ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার ও অধিনায়ক মদ্রিচ আর্জেন্টিনার ডিবক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শট নেন। তার বাঁকানো শটটি গোলরক্ষক কাবায়েরোর প্রচেষ্টাকে মাটি করে দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে।
যোগ করা সময়ে তৃতীয় গোলটি করেন রাকিতিচ। কোভাসিচের পাস থেকে আয়েশি ভঙ্গিতে বল জকালে জড়ান তিনি।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পর বিমর্ষ মেসিরা মাঠ ছাড়েন। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থক। কিংবদন্তি ম্যারাডোনার চোখেও জল। ভাগ্যকে সাথে নিয়ে এবার কি গ্রুপপর্ব পেরোতে পারবে দলটি?
Leave a Reply