রোদ্দুর : আ হ মে দ রি য়া জ


মে ১১ ২০১৮

রোদ্দুর

আ হ মে দ রি য়া জ

রোদ্দুর নেবেন গো, রোদ্দুর? খাঁটি রোদ্দুর লাগবে কারো? নির্ভেজাল রোদ্দুর।
ফেরিঅলার হাঁকডাকে চমকে ওঠলেন বুড়োবুড়িরা। খাঁটি রোদ্দুর! এখনকার ছেলেপুলেরা তো রোদ্দুরই চেনে না। চিনবেই বা কেমন করে? তাঁরা যখন সেই ছোট্টটি ছিলেন, তখনই রোদ্দুর ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে। তারাই ঠিক মতো মনে করতে পারেন না রোদ্দুর কেমন ছিল। ক’দিন আগে এমনি এক ফেরিঅলা এসেছিল রোদ্দুর নিয়ে। আহা! টাইটানের বুড়োবুড়িরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন সে রোদ্দুর কেনার জন্য।
দরদামও শুরু করে দিয়েছিলেন অনেকে। অনেকে আবার কিনেও ফেলেছিলেন। ভাগ্যিস সেই বুড়োটা হঠাৎ কোত্থেকে এসে হাজির হয়েছিল। থুত্থুরে বুড়ো। বয়স যে তার কতো নিজেও জানে না। মহাশূন্যের দীর্ঘ ভ্রমণের ধাক্কা সামলিয়ে কেমন করে টাইটানে হাজির হয়েছিল, কেউ জানে না।
লাঠিতে ভর দিয়ে ঠক ঠক শব্দে রোদ্দুরঅলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন বুড়ো। থমথমে গলায় বললেন, দেখি খানিকটা রোদ্দুর।
ফেরিঅলা এক মুঠো রোদ্দুর দিলেন বুড়োর হাতে। নাকের কাছে নিয়ে মুঠোভরা রোদ্দুরের গন্ধ শুঁকলেন বুড়ো। অনেকক্ষণ ধরে। সবাই বুড়োর দিকে তাকিয়ে রইলেন অবাক হয়ে।
গন্ধ শোঁকা শেষ করে রোদ্দুরের দিকে তাকালেন পিট পিটে চোখে। এই প্রথম সবাই বুড়োর চোখ দুটো দেখল। আধবোঁজা। বুড়োর গলা আগের চেয়েও থমথমে শোনাল, এই বুঝি তোমার খাঁটি রোদ্দুর?
ফেরিঅলার কথা শোনা গেল না। চুপটি করে আছে সে।
বুড়ো আবার বললেন, সব আলো রোদ্দুর হয় না। এটা রোদ্দুর নয়। আলো। শুধুই আলো। এক বিন্দু রোদ নেই এটায়। পারমাণবিক বিস্ফোরণের আলোকে রোদ্দুর বলে চালিয়ে দিতে চাইছ? খাঁটি রোদ্দুরে কখনো ঘ্রাণ থাকে না। কিন্তু এই রোদ্দুরে আছে। দ্যাখো, তোমরা শুকে দ্যাখো।
সবাই শুঁকলো। সত্যিই তো! রোদ্দুরটাতে অনেক ঘ্রাণ। রোদ্দুরে যে ঘ্রাণ হয় না, এটাও ওদের মনে ছিল না। থুত্থুরে বুড়োটা এতকিছু মনে রাখল কেমন করে?
আজও রোদ্দুরঅলার চারপাশে ভিড়। সেই থুত্থুরে বুড়োটাও আছেন। আজও রোদ্দুরের ঘ্রাণ শুঁকলেন সেদিনের মতো। আজও সেদিনের মতো আধবোঁজা চোখের সামনে নিয়ে ভালো মতো দেখলেন মুঠোভরা রোদ্দুরটাকে। সঙ্গে সঙ্গে বুড়োর চোখ দুটো পাঁপড়ি মেলে দিল। বড় বড় চোখে বুড়ো তাকিয়ে রইলেন রোদ্দুরের দিকে। তারপর কাঁপতে কাঁপতে বললেন, হুঁ। একেবারে খাঁটি রোদ্দুর। এক বিন্দু ভেজাল নেই।
ফেরিঅলার দিকে তাকিয়ে বললেন, কোথায় পেলে ভাই এমন খাঁটি রোদটুকু?
ফেরিঅলার মুখে রহস্যময় হাসি। আর যারা ভিড় করেছিল, তারা এবার হুমড়ি খেয়ে পড়ল রোদ কেনার জন্য। এবার বেঁকে বসল ফেরিঅলা, আমি রোদ বেচব না।
সে কি! অবাক হলো সবাই। রোদ বেচবে বলে ফেরি করল এতক্ষণ, আর এখন বলছে বেচবে না। মগের মুল্লুক নাকি? মগের মুল্লুকখানা তো সেই কবে পৃথিবীতেই রেখে এসেছে সবাই। তবে?
শুরু হয়ে গেল হইচইÑকেন বেচবে না, শুনি?
Ñএকটুখানি বেচো না ভাই? আমার নাতিটাকে দেখাবো। ও জীবনে রোদ দেখেনি।
Ñএমন মিঠেরোদ ছোটবেলাতেও দেখিনি। মিঠেরোদের সময়টাতে ঘুমিয়ে থাকতাম। দেখার সুযোগ পাইনি।
Ñবললেই হলো বেচবে না? জোর করে কিনব।
হঠাৎ খেপে উঠতে শুরু করল টাইটানের মানুষরা। এমনকি যারা জীবনে রোদ দেখেনি, তারাও খেপতে শুরু করল। তখনই হঠাৎ রাগে ফেটে পড়ল রোদঅলাÑপৃথিবীটা যখন রোদে রোদে ভরা ছিল, তখন কোথায় ছিলে সবাই? কী করেছিলে মনে নেই? এই বুড়োরা, তোমাদের বলছি, ছোট থাকতে তো খুব রোদ ভালোবাসতে। আর বড় হয়ে কী হয়ে গিয়েছিলে সবাই, মনে নেই? এতটুকু দয়া দেখালে না গাছেদের। ছোটগাছ-বড়গাছ কেটে সাফ করে ফেললে। বড় বড় দালান বানালে। রোদ্দুরদের কথা একটুও ভাবলে না। এখন রোদের জন্য হাহাকার করছ। কেন? সরে যাও সবাই। এক ফোঁটা রোদও আমি বেচব না কারো কাছে। চলে যাও।
মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিল সবাই। এমনকি সেই থুত্থুড়ে বুড়োটা পর্যন্ত। হঠাৎ থুত্থুড়ে সেই বুড়োটার হাত টেনে ধরল ফেরিঅলা। বলল, আপনি যাবেন না দাদু। আমি সবটুকু রোদ আপনাকে দিয়ে যাবো।
সঙ্গে সঙ্গে হাসিতে ভরে ওঠল থুত্থুরে বুড়োর মুখ। অবাক হয়ে ফেরিঅলার মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন, সত্যি!
ফেরিঅলা বলল, সত্যি।
হঠাৎ থুত্থুরে বুড়োর মুখটা মলিন হয়ে গেল। একরাশ কালো মেঘ যেন জড়ো হয়েছে বুড়োর চোখে-মুখে। বুড়োর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জানতে চাইল ফেরিঅলা, দাদু খুশি হননি?
বুড়ো বললেন, হয়েছি।
ফেরিঅলা বলল, তবে মুখটা অমন মলিন কেন?
বুড়ো বললেন, কিন্তু আমি যে তোমার ওই রোদটুকু কিনতে পারব না দাদু। আমার তো অতো টাকা নেই। টাইটানে আসতে গিয়ে সব খরচ হয়ে গেছে। তবে ওই রোদটুকু আমার দরকার। ভীষণ দরকার।
ফেরিঅলা বলল, এই সামান্য রোদ্দুরের বিনিময়ে আপনাকে কিছু দিতে হবে না দাদু। আপনি নিলেই আমি খুশি হবো। রোদ্দুরের ব্যবসা করে অনেক কামিয়েছি। আর চাই না।
আবার রোদ্দুরঅলাকে ঘিরে ভিড়টা জমে ওঠল। সবাই অবাকÑকেন ওই থুত্থুড়ে বুড়োটাকে এমনি এমনি রোদটুকু দিয়ে দিতে চাইছে?
কে যেন জানতে চাইল, কেন? রোদ দিয়ে কী করবে বুড়ো?
রোদ্দুরঅলা বলল, পৃথিবীতে যারা গাছ ভালোবাসতেন, এ বুড়ো তাদের একজন। এ বুড়োর মতো মানুষ না থাকলে পৃথিবীর বাকি রোদটুকুও থাকত না। তারই সামান্য প্রতিদান।
রোদ্দুর পেয়েই বুড়োর খুশি কে দেখে? সবার চোখের সামনে গায়ের ওপর মুড়ে রাখা চাদরের তলা থেকে একটা ছোট্ট চারা গাছ বের করল বুড়ো। চারাগাছটাকে মুখের সামনে তুলে এনে বলল, এবার তুই বড় হবি। রোদ ছাড়া তো এতদিন বড় হতে পারিসনি। এবার পারবি।
চারাগাছ দেখে সবার চোখ উঠে গেল কপালে। নতুন এ গ্রহটায় কেমন করে চারা গাছ নিয়ে এসেছে বুড়োটা?
সবার কাছে সেটাই একটা রহস

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি


জলবায়ু পরিবর্তন