বিশেষ সংবাদদাতা: আদালতের আেেদশের ভুল ব্যাখা দিয়ে এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা এক লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে এক চিংড়ি ঘেরে হামলা চালিয়ে ২৫ হাজার হাজার টাকা লুটপাট করেছে। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তিনজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ঘণ্টাব্যাপি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গাবতলা গ্রামে এ হামলা চালানোর পর থানায় অভিযোগ দেওয়ায় হামলাকারিরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে ঘের জবরদখল করে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দাবিকৃত চাঁদার এক লাখ টাকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উত্তম দাসের নেতৃত্বে ইউপি সদস্য ইব্রাহীম হোসেন, গাবতলা গ্রামের দেবব্রত সানা, অনির্বান দাস, রাজ্যেশ্বর দাস, কাটাখালির ইসমাইল গাজী , আমিনুর সরদারসহ ২০/২৫জন সন্ত্রাসী নারায়ন সরকার ও কালিপদ দাসের ঘেরে লুটপাট শুরু করে। জাল দিয়ে মাছ ধরা ও ঘেরের বাসা ভাঙচুরের চেষ্টার প্রতিবাদ করায় গাবতলা বাজারের মাসুম বিল্লাহ, আমিরুল সানা ও হামিদ গাজীকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ সময় তারা কালিপদ ও নারায়নকে যেখানে পারে সেখানে খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে আশাশুনি ও সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। ঘটনার রাতেই কালিপদ দাস বাদি হয়ে উত্তম মেম্বরসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
তারা আরো জানান, নারায়ন সরকারের পৈতৃক পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত গাবতলা মৌজার সাড়ে সাত বিঘা জমি ২০০২ সাল থেকে নারায়ন সরকার ও তিনিসহ পাঁচজন একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে দীর্ঘদিন মাছ চাষ করে আসছিলেন। ২০১৭ সালে তারা আবারো টাকা জমা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর সার্ভেয়র বিমল গাইন ও সেকশান অফিসার মাদকাসক্ত মোখলেছুর আর্থিক সুবিধা নিয়ে দেবব্রতসানা সহ ১১জনের একটি সুফলভোগী দলকে ইজারা দেন। ২০১৭ সালের ১৬ মে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সুফল ভোগী কমিটির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইজারা ও চুক্তি বাতিলের জন্য কালিপদ দাস সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আবেদন করলে ২ আগষ্ট বন্দোবস্তের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। বিগত ইউপি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীকে সমর্থন করায় গত বছরের ১৮ জুন উত্তম মেম্বরের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা কালিপদ দাস ও নারায়ান সরকারের ওই ঘেরের বাসা ভাঙচুর ও মাছ লুটপাট করে পাঁচজনকে পিটিয়ে জখমকরে । পরে তারা ঘের জবরদখলে রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে কালিপদ দাস বাদি হয়ে জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে থানায় একটি মামলা করে। এ ছাড়া মামলা করা হয় অতিরিক্ত জেলা ম্যেিজষ্ট্রট আদালতে। আশাশুনি সহকারি ভূমি কমিশনার কালিপদ দাস ও নারায়ন সরকারের অনুকুলে দখল স্বত্ব প্রদান করলে আদালত তাদের পক্ষে রায় প্রদান করে। এ ছাড়া এ নিয়ে আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে দেওয়ানী ২৬/১৬ দেওয়ানী মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে সরকারি আইনজীবী অ্যাড. শম্ভুনাথ সিংহ জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে গত ১৮ এপ্রিল সুফলভোগী কমিটির দলনেতা দেবব্রত সরকারের পক্ষের আইনজীবীরা সহকারি ভূমি কমিশনারের দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন না আসায় দেওয়ানী আদালতে মামলা চলমান থাকার কারণ দেখিয়ে বন্দোবস্ত স্থগিতাদেশ বাতিলের দাবি জানান। বিচারক স্থগিতাদেশ বাতিল না করে দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার আদালতে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। সেক্ষেত্রে বনেদাবস্ত স্থগিতাদেশ বাতিল না হওয়ায় দেবব্রত সরকার ও তার কমিটির সদস্যদের ওই ঘেরে যেতে পারবে না। এমনকি আগামি ১৫ মে পরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই জমি নতুন বন্দোবস্ত দিতে পারবে না।
কালিপদ দাস ও নারায়ন সরকার জানান, আদালতের আদেশের ভুল ব্যাখা দিয়ে গত ৮ মে উত্তম মেম্বরের নেতৃত্বে তাদের ঘেরে হামলা চালিয়ে ২৫ হাজার টাকার বাগদা লুটপাট করা হয়েছে। বাসা ভাঙচুর ও মাছ ধরায় বাধা দিলে মাসুমসহ তিনজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ করায় আহতের কাল্পনিক নাটক সাজিয়ে পাল্টা মামলা করার চেষ্টা করছেন উত্তম দাস।
উত্তম দাস সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামলা খারিজ করে দেওয়ায় নারায়ন ও কালিপদ দাসের ওই ঘেরে থানার এক্তিয়ার নেই । তাই তারা গত ৮ মে ওই ঘের দখলে নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি ওই সুফলভোগী কমিটির কেউ না হলেও জবরদখলে অংশ নিয়েছিলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনস্বার্থে অনেক কিছুই করতে হয়।
আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন জানান, কালিপদ দাসের অভিযোগ অনুযায়ি গত বৃহষ্পতিবার উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়। ১৮ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কালিপদ দাসের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করলেও উত্তম দাস ও তার পক্ষের লোকজন বিষয়টি খারিজ হয়ে গেছে বলায় আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি আনার জন্য কালিপদ দাসকে আগামি মঙ্গলবার সময় দেওয়া হয়েছে। তবে গত ৮ মে কালিপদ দাস ও নারায়ন সরকারের দখলীয় ঘের উত্তম মেম্বরের উপস্থিতিতে জবরদখল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
Leave a Reply