1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ অপরাহ্ন
৭ বৈশাখ, ১৪৩২
Latest Posts
📰সাংবাদিক আরিফুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন📰ধরা’র আয়োজনে “হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা” বিষয়ক আলোচনা সভা📰আশাশুনি সরকারি কলেজে ৬  শিক্ষককে এডহক নিয়োগ📰রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে মিয়ানমারে শান্তি আসবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা📰মাদকসহ বিএনপি নেতার স্ত্রী আটক📰ফলোআপ নিউজ তালায় সেচপাম্পের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে জীবন বিলকিস বেগমের!📰কুল্যায় ফিলিন্তিনদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ📰আনুলিয়ায় একশত পরিবারের  মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ📰আশাশুনির খাজরা হাট বাজারের  ইজারা গ্রহিতার সাব ইজারা হস্তান্তর📰সাতক্ষীরা জেলা মন্দির সমিতির নব-গঠিত কমিটির অভিষেক

রূপকথা ও নীল প্রজাপতি

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮
  • ২২২৭ সংবাদটি পড়া হয়েছে

রূপকথা সেদিন ফুলবাগানে হাঁটছিল। চারিদিকে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। মনকাড়া সব ফুল। গোলাপ বেলী, রজনীগন্ধা, গাঁদা, অপরাজিতা, জবা, সূর্যমূখী আরো কত কি! ফুলের সুবাসে তার মন মৌ মৌ করতে লাগলো। সে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলো- ফুল এত সুন্দর হয় কেন? কোথা থেকে পায় এত রূপ? কী অপরূপ সুবাস। ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। একটু আগেই তো ওর মন খারাপ ছিল। আম্মু বকা দিয়েছে। চুলের ঝুঁটি বাঁধতে চায়নি বলে। সে বলেছিল- আম্মু আমার চুলে খোঁপা করে দাও। আমি ফুল গুঁজব। কিন্তু অতটুকুন চুলে কি খোঁপা হয়! ঝুঁটি হয়। রূপকথাও নাছোড়বান্দা। তাকে খোঁপা করে দিতেই হবে। শেষমেশ আম্মুর বকুনি খেয়েই থামলো সে।

রূপকথার বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। এখন থেকেই সাজুগুজু ওর খুব পছন্দ। সারাক্ষণ ড্রেসিংটেবিলের সামনে ঘুরঘুর করে। ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়। টিপ পরে। আব্বু এক ডজন চুড়ি এনে দিয়েছে। টুকটুকে লাল। সেই চুড়ি পরেই সারাক্ষণ রিন্-ঝিন ছন্দে ঘরময় ঘুরে বেড়ায়।

একদিন আম্মুর মেকাপ বক্স নাগালে পেয়েছিল। হাতে যেন চাঁদ পেয়েছিল। আম্মু ঘরে ঢুকেই দেখে অর্ধেক মেকাপ শেষ। আর রূপকথা রঙ মেখে সং সেজে বসে আছে।

ফুলবাগানে এসে ওর মনটা ভালো হয়ে গেল। নেচে নেচে খেলতে লাগলো। ভাবলো- ফুল নিয়ে একটা কবিতা বানালে কেমন হয়। সে বাবার কাছ থেকে কবিতা বানানো শিখে ফেলেছে। বাবা বলেছে ছন্দ দিয়ে কবিতা বানাতে হয়। রূপকথা কবিতা বানাতে চেষ্টা করলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভাবতে লাগলো। কিন্তু ভাব এল না। ভাব না এলে কবিতা হয় না। সে মনে মনে বলল- আয় কবিতা আয়। হঠাৎ এক লাইন চলে এল-

“ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত”

তারপরে কি? কি হতে পারে পরের লাইন? আর মেলাতে পারলো না। সে আবার ঘুরতে শুরু করে দিল। হঠাৎ একটা নীল প্রজাপতিকে দেখতে পেল। জবা ফুলের উপর খেলছে। আর ওমনি পরের লাইন মিলে গেল –

“ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো”

বাহ! কী চমৎকার মিল। তারপর আবার ভাবতে লাগল। চার লাইন কবিতা আজ সে মেলাবেই। কবিতাটা বাবাকে শোনালে খুব খুশি হবে। খেলতে খেলতে ভাবতে ভাবতে এক সময় সে চার লাইন কবিতা বানিয়েই ছাড়লো।

“ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত
ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো
মনটা আমার ফুলের সুবাস মাখা
আমার আছে রঙিন দুটি পাখা।”

বাহ! কী চমৎকার! নিজেকেই বাহবা দিল। বাবা নিশ্চই খুব খুশি হবে। সে কবিতাটা জোরে জোরে পড়তে লাগল আর নেচে নেচে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। হঠাৎ দেখতে পেল, নীল প্রজাপতিটা তার দিকেই আসছে। রূপকথা অবাক হল। ভাবলো- বাব্বা কি সাহস! আমাকে একটুও ভয় পাচ্ছে না।

এক সময় প্রজাপতিটা রঙিন পাখা দুলিয়ে উড়তে উড়তে ওর কাঁধে এসে বসলো। রূপ ভীষণ অবাক হলো। সে কোন নড়াচড়া না করে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয় গেল। ভাবলো- ইস! এই মুহুর্তে বাবাকে যদি ডাকা যেত। তাহলে নিশ্চই একটা ছবি তুলে দিত। প্রজাপতির সঙ্গে ছবি। ক’জনের আছে এমন ছবি। বাবা সারাক্ষন রূপকথার ছবি তোলে। মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ক্লিক! ক্লিক! তবে প্রজাপতির সঙ্গে ছবি তোলাটা ভাগ্যের ব্যাপার। তাও আবার বসেছে কাঁধের উপর।

হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল ওর। আম্মু একদিন বলেছিল- প্রজাপতি গায়ে বসলে তার বিয়ে হয়ে যায়। কথাটা ভেবেই সে লজ্জা পেল। তাহলে কী ওর বিয়ে হবে। ছি ছি! কি ভাবছে এসব। ও তো এখনো খুব ছোট। এখনো ছোট কাকুরই বিয়ে হয়নি। সে প্রজাপতিটাকে আড়চোখে দেখতে লাগল। কী অররূপ! একটু নড়াচড়া করলেই হয়তো ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

হঠাৎ রূপকথাকে হতবাক করে দিয়ে প্রজাপতিটা কথা বলে উঠল- এ্যাই তোমার নাম কি? রূপকথা প্রথমে ভয় পেয়ে গেল। কে কথা বলল? বাগানে ও আর প্রজাপতি ছাড়াতো কেউ নেই। প্রজাপতি কি কথা বলতে পারে নাকি? ওর গা কেঁপে উঠলো। ভূতটুত নয় তো। প্রজাপতি আবারো কথা বলে উঠলো- কী ব্যাপার! এই মেয়ে তোমার নাম বলছ না কেন?

আ-আ-আমি রূপকথা। রূপকথা তোতলাতে তোতলাতে বলল।
ও। আমার নাম টুং। প্রজাপতি জানালো।
টুং নামটা রূপকথার বেশ পছন্দ হলো। প্রজাপতি আবার জানতে চাইলো-
তুমি ফুলবাগানে কি করছ?
আমি খেলছি।
আর আমি ঘুরছি।

কিছুক্ষন যেতেই দু’জনের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেল। এবার রূপ জনতে চাইলো- তুমি রোজ এখানে আসো?
প্রজাপতি বলল- এই বনেই তো আমাদের বাড়ি। তবে এদিকটাতে খুব একটা আসা হয় না। আমরা থাকি ওই যে গোলাপবনটা দেখতে পাচ্ছ, ওদিকটাতে।
আজ এলে যে……
আজ এসেছিলাম আমার ভাইকে খুঁজতে।
ও তোমার ভাইও আছে?
থাকবে না কেন? আমার ভাইয়ের নাম টাং। আমরা দু’ভাইবোন। টুং আর টাং। দুয়ে মিলে টুংটাং।

প্রজাপতির কথাগুলো রূপকথার খুব ভালো লাগলো। ওর কথাগুলো কেমন যেন বড়দের মতো। কড়াকড়া। রূপ আবার জানতে চাইলো-
তোমার বাবা-মা আছে?
হ্যা আছেই তো। তবে আজ তারা বেড়াতে গেছে। মনে হয় সর্ষে ক্ষেতে। অনেক মধু সেখানে। খুব মিষ্টি।
তুমি তাহলে একা?
না, আমার ভাইটা আছে। তবে ও পালিয়েছে। ওকে খুঁজতেই এদিকে আসা। বাবা মা বাসায় নেই। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।
তুমি বড়দের মতো করে কথা বলছ। শুনতে ভালোই লাগছে। রূপকথা বলল।
হ্যা, আমি তো বড়ই। টাং এর বড় বোন আমি।
ও হ্যা। এজন্যই বড়দের মতো।
তোমার ভাই নেই?
না আমার কোন ভাই নেই। আমি একা। বাবা-মায়ের একমাত্র।
হুম! বাবা-মায়ের আদর তাহলে একাই খাচ্ছ?
রূপকথা হেসে ফেলল- হ্যা খাই তো।

প্রজাপতি বলল- আচ্ছা কিছুক্ষণ আগে তুমি বিড়বিড় করে কি বলছিলে?
ও, ওটা কবিতা।
কবিতা?
হ্যা, আমিই বানিয়েছি।
তুমি কবি তাহলে। অনেক গুণ তোমার মধ্যে।
ধন্যবাদ। রূপ বলল।
আচ্ছা কবিতাটা একটু শোনাও তো। ভাল করে শুনি।
রূপকথা প্রজাপতিকে কবিতা শোনাতে লাগল-

“ফুল বাগানে ফুল ফুটেছে কত
ঘুরছি আমি প্রজাপতির মতো
মনটা আমার ফুলের সুবাস মাখা
আমার আছে রঙিন দুটি পাখা।”

কবিতা শুনে প্রজাপতি চটে গেল। বলল- কি বললে? কি বললে তুমি? তুমি প্রজাপতি? তোমার রঙিন পাখা? তাহলে আমি কি?
রূপকথা ঘাবড়ে গেল- না না এটা তো কবিতা। কবিতা তো এমনই হয়। মনের কল্পনা। বাবা বলেছে কল্পনা দিয়েই কবিতা লিখতে হয়।

প্রজাপতি বলল- তা কল্পনা আর খুঁজে পেলে না? আমাদের কেন কল্পনা করবে? তুমি তো মানুষ। প্রজাপতির মতো কেন হতে চাইবে। কই আমি তো মানুষের মতো হতে চাই নি।
তুমি কবি হলে ঠিকই আমাদের মতো হতে চাইতে। রূপকথা আরো বলল-
শোন। তোমরা তো খুব সুন্দর, অপরূপ তোমাদের রূপ। রঙিন তোমাদের পাখা। কোন শাসন-বারণ নেই। লেখাপড়া নেই। আম্মু জোর করে খাওয়ায় না। সারক্ষণ উড়ে উড়ে ফুলের বনে ঘুরে বেড়াও। আর ফুলের মধু পান কর। তাই তো আমি তোমাদের মতো হতে চেয়েছি।

রূপের কথাগুলো প্রজাপতির ভালো লাগলো। বলল- ও, এবার বুঝতে পেরেছি। তোমরা আমাদের খুব পছন্দ কর।
হ্যা করি তো।
প্রজাপতি বলল- ঠিক আছে। ঠিক আছে। তবে তোমাকে আর প্রজাপতির মতো হতে হবে না। তুমিও খুব সুন্দর মানুষ। অনেক ভাল। এখন থেকে তুমি আমাকে বন্ধু ভাবতে পার।

ঠিক আছে বন্ধু। রূপকথা প্রজাপতিকে বন্ধু হিসাবে পেয়ে খুব খুশি হল।
প্রজাপতি আরো বলল- এখন থেকে প্রতিদিন এখানে এসো। তোমার সঙ্গে গল্প করব। আর ঐ গোলাপ গাছটা দেখছ, ওখান থেকে একটা লাল গোলাপ নিয়ে যেও। বন্ধুর জন্য আমার উপহার।
রূপকথা বলল- ঠিক আছে বন্ধ্।ু
আর একটা কথা। আমাদের বন্ধুত্বের খবর আমার ভাই টাং যেন না জানে। ও খুব পাজী। তাহলে বাবা-মা’কে বলে দেবে।
ঠিক আছে। কেউ জানতে পারবে না।
ওই তো আমার ভাইটা এদিকেই আসছে। আমাকে এখনই উঠতে হবে। দেখে ফেললে ঝামেলা করবে। প্রজাপতি টাং কে দেখালো।
রূপকথা দেখতে পেল- একটা হলুদ পজাপতি ওদের দিকেই আসছে।

নীল প্রজাপতিটা উড়তে উড়তে রূপকথাকে বলল- তোমার কবিতাটা আমি মুখস্ত করে নিয়েছি। ওটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এখন থেকে আমি ওটা সুর করে বলব আর ঘুরে বেড়াব।
ঠিক আছে বন্ধু। এখন থেকে কবিতাটা তোমার। তুমি আমাকে গোলাপ উপহার দিয়েছ। আমি তোমাকে দিলাম কবিতা।

সন্ধ্যা হতে আর বেশি দেরি নেই। প্রজাপতি উড়তে উড়তে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। রূপকথা শুনতে পেল আম্মু ডাকছে- মামনি চলে এসো। এখনই সন্ধ্যা নামবে।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2025
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd