1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
২৩ আষাঢ়, ১৪৩২
Latest Posts
📰সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ছয় দিন, থানার সামনেই প্রকাশ্যে ঘুরছেন আসামিরা📰সোরা দক্ষিণ পাড়ার মেইন রাস্তা পানিতে তলিয়ে জনদুর্ভোগ, সমাধানে নেই কার্যকর উদ্যোগ📰ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং ও গোডাউন শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সভা📰দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে, খুব শিগগিরই চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে:খাদ্য উপদেষ্টা📰তালায় এক বৃদ্ধের আত্মহত্যা📰সাতক্ষীরায় জগন্নাথ দেব উল্টা রথযাত্রার মাধ্যমে নিজের বাড়ি ফিরে গেলেন📰আশাশুনিতে ৩০ বছরের ভোগদখলীয় ঘেরে জবর দখল ও লুটপাটের প্রতিকারে সংবাদ সম্মেলন📰📰দেবহাটায় কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক আটক📰কালিগঞ্জে মোটরসাইকেল চুরির সময় হাতেনাতে আটক ১

মেজর (অব) জিয়াউদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১৮
  • ৭৫০ সংবাদটি পড়া হয়েছে

মেজর (অব) জিয়াউদ্দিনকে প্রথম দেখি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরের দিনগুলোতে, ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে আবু ইউসুফ খান বীর বিক্রমের বাসায়। তখন তাঁর সঙ্গে সরাসরি পরিচয় ছিল না। তিনি সুন্দরবন থেকে গ্রেপ্তার হন ডিসেম্বরে।

১৯৭৭ সালের কোনো এক সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আসবেন বলে জাসদ নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে খবর পাই। আমি তখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর অপেক্ষায় একবার আউটডোর আর একবার এমার্জেন্সিতে দৌড়াচ্ছি। তখন এমারোজন্সি ছিল এখনকার পরিচালকের অফিস যেখানে, সেখানে। আর আউটডোরটি বর্তমানের স্থানেই।

যাহোক, এক সময় এমারজেন্সি দিয়ে তিনি প্রবেশ করলেন। বুক-চিতানো লম্বা গড়নের স্মিত হাস্যোজ্জ্বল জিয়া ভাইয়ের এক হাতে হাতকড়া লাগানো। পেছনে কমপক্ষে ৫০ জন পুলিশ। সমবেত মানুষ তাঁর চলার পথের দুপাশে দাঁড়িয়ে গেল এক নজর দেখার জন্য। যদিও তিনি পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে এসেছেন কয়েদি (সাজাপ্রাপ্ত বন্দি) হিসেবে, কিন্তু আমার কাছে মনে হল তিনি একজন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এত পুলিশ তাঁর পাহারায়, করিডোরের দুপাশে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে!

দৌড়ে গেলাম তাঁর পাশে, পরিচয় দিলাম। তিনি বললেন, জেলখানা থেকেই তিনি জেনে এসেছেন, আমি তাঁর জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অপেক্ষায় থাকব। আমার দায়িত্ব ছিল তিনি চিকিৎসার জন্য যে চিকিৎসকের কাছে যাবেন তাঁকে জিয়া ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। বলাবাহুল্য, সেটার আর দরকার হয়নি। গোটা হাসপাতালই যেন তাঁকে অভ্যর্থনার জন্যে দাঁড়িয়ে ছিল।

পুলিশ আমাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিতে চাইল। জিয়া ভাই গম্ভীর গলায় পুলিশকে বললেন, ”হি ইজ এ ডক্টর, আই নিড হিম ফর মাই ট্রিটমেন্ট।”
যাহোক, পুলিশ আমাকে জিয়া ভাইয়ের পাশে পাশে থাকতে আর বাধা দিল না। কোন ডাক্তারের কাছে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটা মনে নেই। তবে জিয়া ভাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে হল না। বরঞ্চ তিনিই আমাকে ডাক্তারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বিপুল পুলিশের উপস্থিতি, গোয়েন্দা বিভাগ কর্তৃক আগেভাগেই হাসপাতালের পরিচালককে জানানো ইত্যাদি কারণে সব কিছু নির্ঝঞ্ঝাটে হয়ে গেল।

জেলখানা থেকে মুক্তি পাবার পরে জিয়া ভাইয়ের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হই। তিনি কর্নেল তাহের মামলায় গোপন সামরিক আদালতে ১২ বছরের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হয়েছিলেন। গোপন বিচারে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের ফাঁসির রায় ঘোষণা হবার পরই জিয়া ভাই তাহের ভাইয়ের জবানিতে একটা কালোত্তীর্ণ কবিতা লিখে গেছেন। তাহের ভাই সে কবিতার কথা পরিবারের প্রতি তাঁর শেষ চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। পড়েছেন ২১ জুলাই ভোরে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হবার ঠিক আগের মুহূর্তেও।
সংকলিত

“জন্মেছি, সারা দেশটাকে কাঁপিয়ে তুলতে, কাঁপিয়ে দিলাম।
জন্মেছি, তোদের শোষণের হাত দুটো ভাঙব বলে, ভেঙে দিলাম।
জন্মেছি, মৃত্যুকে পরাজিত করব বলে, করেই গেলাম
জন্ম আর মৃত্যুর বিশাল পাথর রেখে গেলাম
পাথরের নিচে, শোষক আর শাসকের কবর দিলাম
পৃথিবী, অবশেষে এবারের মতো বিদায় নিলাম।”

জিয়া ভাই মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। সেই যে তিনি সুন্দরবনকে ভালোবেসে ছিলেন, সে ভালোবাসা ছিল আমৃত্যু। ১৯৭৫এর ৭ নভেম্বর তিনি ঢাকায় ছিলেন না, কর্তব্যকর্মে ঢাকার বাইরে ছিলেন। সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করতে না পারায় খুবই মনোকষ্টে ভুগছিলেন। তবে তিনি ঢাকায় থেকে যদি ৭ নভেম্বরে বিপ্লবী সিপাহীদের প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দিতে পারতেন, তাহলে হয়তো হতে পারতেন রুশ বিপ্লবের মূল কেন্দ্র পেট্রোগ্রাদ সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানের কমান্ডার ট্রটস্কির মতো সফল। ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান হযতো জিয়াউর রহমানের কাছে হাতছাড়া হত না।

সে সময় তিনি তাহের ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি চাইছিলেন সুন্দরবনে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের ঘাঁটি এলাকাতে বিপ্লবের ‘মুক্ত এলাকা’ গঠন করতে। চীন বিপ্লবের মাও জে দং হয়তো তাঁকে এ ধরনের চিন্তায় প্রভাবিত করে থাকতে পারেন। স্বাধীনতার পূর্বকালে ছাত্রজীবনে জিয়া ভাই মাওপন্থী ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তবে তাহের ভাই তাতে সায় দিতে চাচ্ছিলেন না। কারণ জাসদ রাজনীতির বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থানের নীতি ছিল রাজধানীকেন্দ্রিক গণঅভ্যুত্থান, মাওয়ের চীন বিপ্লবের মতো ‘গ্রাম এলাকা মুক্ত করে শহর ঘেরাও করা’ নয়।

তবু জিয়া ভাই যখন ‘নাছোড়বান্দা’ তখন তাহের ভাই তাঁকে বললেন, ”তুমি যখন সেনানিবাসে ফিরে যাবে না, আত্মসমর্পণ করবে না, তখন কটা দিন সুম্দরবনে কাটিয়ে এস। পরিস্থিতি অনুকূল হলে ঢাকাতে ফিরে এস। অনেক কাজ বাকি পড়ে রয়েছে।“
তাহের ভাইয়ের গ্রেপ্তারের পর জিয়া ভাইও সুন্দরবনে জেলেদের নৌকা থেকে গ্রেপ্তার হন। পুলিশ ও নৌবাহিনীর এক বিশাল বাহিনী গোটা দুবলার চর ঘেরাও করে তাঁকে অনেক খুঁজে গ্রেপ্তার করে। কারণ জেলেদেরে কেউ তাঁকে দেখিয়ে দিচ্ছিল না। পুলিশের গোয়েন্দারা তাঁর দীর্ঘ অবয়ব দেখে এক জেলেনৌকায় তাঁকে শনাক্ত করে। তবে পুলিশের এক শুভানুধ্যায়ী তাঁকে কানে কানে বলে দেয়, যতই তাঁকে বন্দুকের বাট দিয়ে পিটানো হোক, তিনি যেন মাটিতে শুয়ে না পড়েন। কারণ উপরের নির্দেশ আছে জিয়া ভাইকে ধরার পরে হত্যা করার। শুয়ে পড়লে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে বলা হবে, উত্তেজিত জনতা তাঁকে হত্যা করেছে।

পরামর্শটি কাজে লেগেছিল। জিয়া ভাই চরম নির্যাতন সহ্য করে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় নেওয়া হয়। হাজার হাজার জনতা তাঁকে এক নজর দেখার জন্য থানা ঘেরাও করে। তারা শুনেছিল জিয়া ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের শান্ত করার জন্য মাঝখান থেকে কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠকে থানার ভেতরে ডেকে নিয়ে জিয়া ভাইকে দেখানোর পর জনতা থানা থেকে ফিরে যায়।

জিয়া ভাই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মুক্তিযুদ্ধে ও ১৯৭৫এর নভেম্বরে বিপ্লবে উত্তাল দিনগুলোতে সুন্দরবনে তাঁর ঘাঁটি গড়ে তোলা– এগুলো আমাদের কাছে প্রবাদসম। জিয়া ভাই যেখানে থাকুন আমাদের জন্য অহংকার হয়েই থাকবেন। নতুন প্রজন্মকে সাহসী করে তুলতে হলে তাঁকে এক আলোকবর্তিকা বলে মানতে হবে।

(ডা. মুসতাক হোসেন, ডাকসু সাবেক জিএস)

সংকলিত

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2025
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd