প্রসঙ্গ : মে দিবস


মে ১ ২০১৮

Spread the love

মে দিবস কি?

১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরীকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের চত্বরে সংঘটিত শ্রমজীবি মানুষের উপর অতর্কীত হামলা চালিয়ে বিশ্বশ্রমিকের অধিকার আদায় ও মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার দিনটাকে স্মরণ এবং তাদের সেই চেতনায় নতুন ভাবে উদ্ধুদ্ধ হয়ে শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে জাগ্রত থাকার শপথ গ্রহণের একটা বিশেষ দিন এই মে দিবস।
নানাবিধ উপাধিতে আজকের দিনটিতে এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। মে দিবসকে বলা হয় – আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস। তাছাড়া ও এ দিবসটি – আন্তর্জাতিক শ্রমিক হত্যা দিবস , লেবার ডে , ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কার ডে ইত্যাদি। মেহনতি জনতার আন্তর্জাতিক সংহতি ও সংগামের স্মৃতিস্মারক এই দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ের দিন এ দিবস।

মে দিবস কেন?

শ্রমিকদের অধিকার আদায় এবং মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এ দিবসের আয়োজন। মালিক শ্রমিক সম্পর্ক , দায়িত্ব ও কর্তব্যকে স্মরণ করার জন্য এ দিবস। মালিক পক্ষের শোষণ , বঞ্চনা থেকে শ্রমিকদের মুক্তির আকান্খা নিয়ে ১৮৮৬ সালের ১লা মে’র সেই সংগ্রামের স্মৃতি ও চেতনায় নতুন ভাবে জাগ্রত হবার লক্ষ্যে এ দিবসের আয়োজন।

মে দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:

১২৬ বৎসর পূর্বে ১৮৮৬ সালের ১লা মে আমেরীকার শিকগো শহরের শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কর্মদিবস ও কর্মক্ষেত্রে মানবতার আইন প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে হে মার্কেটের চত্বরে সমাবেশ করতে গেলে রাষ্ট্র শক্তির নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে শিকাগোর হে মার্কট চত্বরে পুলিশের বন্দুকের গুলি বুকে ধারণ করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ১১ জন শ্রমিক বিশ্ব শ্রমিক জাতিকে নতুনভাবে বাঁচবার পরণা ও শিক্ষা দিয়ে চলে যান পৃথিবী থকে চিরদিনের জন্য। প্রতিষ্ঠা করে যান আজকের মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস।
এ ঘটনার পূর্বে শ্রমিকদের করতে হতো দৈনিক ৯ থেকে ১৮ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম। করতে হতো তাদের মানবেতর জীবন যাপন। মিলতো নগণ্য পারিশ্রমিক। দাসত্ব জীবন ছিল কারো কারো। মালিক পক্ষের ইচ্ছায় শ্রমিকদের উপর চলতো নানাবিধ নিষ্ঠুর নির্যাতন।
সে সময় ছিলনা বিশ্বের কোথাও শ্রমিক আইন। শ্রমিকদের মানবিক অধিকার , অর্থনৈতিক অধিকার বতে কিছুই ছিলনা। ছিলনা তাদের স্বাধীনতা। ছিলনা চাকরীর স্থায়িত্ব ও ন্যায় সঙ্গত পারিশ্রমিকের কোন নিশ্চয়তা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এইসব মানবতা বিরোধী কর্মের অবসান এবং শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কর্মদিবস নির্ধারণ , প্রাপ্য অধিকার আদায় , মর্যাদা সমুন্নত রাখতে তথা মেহনতি মানুষদের জন্য মানবতার আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮৮৪ সালে শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা ১৮৮৬ সালর ১লা মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
তাদের এ দাবী মালিক পক্ষ মেনে না নিলে ১৮৮৬ সালের ৪ঠা মে সন্ধ্যায় শিকাগোর হে মার্কেট চত্বরে আমেরীকা ও কানাডার প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক জোটবদ্ধ হয়ে সমাবেশ করে। শ্রমিকদের সমাবেশের মুল কার্যক্রম শুরু হবার অল্প কিছুক্ষণ পরই অদূরে দন্ডায়মান পুলিশ বাহিনীর নিকটে হঠাৎ বোমা বিস্ফোরিত হলে এক পুলিশ তাতে নিহত হয়। সাথে সাথেই পুলিশ বাহিনী সমাবেশের উপর অতর্কীত হামলা চালিয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকলে তাতে ১১ জন শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পুলিশ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয় আরো ৮ জনকে শ্রমিককে।
১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর এক প্রহসনমুক বিচার আয়োজনের মাধ্যমে উক্ত ৮ জনের মধ্য থেকে ৬ জনের ফাঁসী কার্যকর করা হয়। বাকী দুইজনের মধ্যে একজনকে দেয়া হয় ১৫ বৎসরর কারাদন্ড, আর অপর জন কারাগারের ভিতরেই আত্মহত্যা করেন। বোমা বিষ্ফোরণকারীর পাওয়া যায়নি কোন হদিস।
১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্ব শ্রমিক সম্মেলনে ১লা মে‘কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই থেকে প্রতি বৎসর ১লা মে’কে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করে আসছে বিশ্ববাসী।
পরবর্তীতে ১৮৯৩ সালের ২৬শে জুন পুলিশ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত উক্ত ৮ জন শ্রমিককে নিরাপরাধ বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি


জলবায়ু পরিবর্তন