ডিবি পুলিশের জেলা শাখার পরিদর্শকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ


মে ১০ ২০১৮

Spread the love

বিশেষ সংবাদদাতা: গোয়েন্দা পুলিশের জেলা শাখার পরিদর্শক ও তার টিমের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও নির্যাতনের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ ব্যাবসায়ীদের কারণে অকারণে হয়রানি এবং এবং তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশের জেলা শাখার পরিদর্শক ও তার টিম। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভেঙে পড়বে পুলিশের ভাবমূর্তি।
শহরের নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী খালিদ হোসেন মিলন জানান, গত ৯ এপ্রিল রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে রাধানগরের মকবুল হোসেন তাকে নিয়ে কাটিয়া কাস্টমস মোড়ের আশরাফ হোসেনের ছেলে ফাহিম আহম্মেদ অর্ণব আটকের সত্যতা যাঁচাই এর জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে যান। একপর্যায়ে উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে তারা বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিলে উপপরিদর্শক মঞ্জুরুল পরিচয় জেনে তাকে (মিলন) নিমতলায় ডেকে নিয়ে হ্যা-কাপ পরিয়ে কথিত গারদঘরে ঢুকিয়ে দেয়। তার সন্ধান করতে থাকা মকবুলকেও আটক করেন মঞ্জুরুল হাসান। তাদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল রেখে দিয়ে রাত একটার দিকে হাতকড়া বিহীন মকবুলসহ তাকে হাতকড়া পরিয়ে কেষ্ট ময়রার ব্রীজের পাশে পুরাতন মোটর সাইকেলের শোরুম সরদার ট্রেডিং এর সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বাড়ির চাবি খুঁজতে মকবুলের শোরুম খুলে কয়েকটি ড্রয়ার ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে চাবি না পাওয়ায় মোটর সাইকেলের মিটার টেম্পারিং করার অভিযোগে তাকেসহ মকবুলকে একটি সাদা রং এর মাইক্রোবাসে করে তার বাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাড়ির গেটের দরজা খুলতে দেরী হওয়ায় মারপিট করতে করতে কোলাবসিগ্যাল গেটের তালা ভেঙে দোতলায় ওঠেন পরিদর্শক শাহারিয়ার, উপপরিদর্শক মঞ্জুরুল, সহকারি উপপরিদর্শক মিজান, সহকারি উপপরিদর্শক রিয়াজুল ইসলাম, সহকারি উপপরিদর্শক জিয়া, সহকারি উপপরিদর্শক রাজু। পুলিশের কথামত তার স্ত্রী মনিরা পারভিন ঘরের দরজা খুলে দেয়। এরপরপরই উপপরিদর্শক মঞ্জুরুল একটি ড্রয়ার ভেঙে বাড়ি বিক্রির শেষ সম্বল এক লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা বের করেন। দু’ লাখ সাত হাজার টাকা ছিল, বাকী টাকা কোথায় গেল সেটা তার কাছে জানতে চায় মঞ্জুরুল। একপর্যায়ে মঞ্জুরুল টাকা আবারো মনিরার কাছে দিয়ে দেন। কয়েকটি ড্রয়ার ভেঙে আসবাবপত্র তছনছ করে কিছুক্ষণ পর শাহারারিয়ারের কথামত আবারো ওই টাকা নিয়ে চলে আসেন মঞ্জুরুল। গভীর রাতের ঘটনা হলে মোটর সাইকেলের মিটার টেম্পারিং এর মেশিন খোঁজার নামে কৌশলে পুলিশের দস্যুতা অনেকেরই নজর এড়ায়নি। এ সময় শাহারিয়িারের মুখ থেকে মাদকের গন্ধ ভেসে আসছিল। পরে তাদের দু’জনকে আবারো শোরুমে নিয়ে এসে কয়েকটি ড্রয়ার ভেঙে খাতাপত্র নিয়ে আসে পুলিশ। তাদেরকে আটক রাখা হয় গোয়েন্দা পুলিশের কথিত গারদঘরে। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে মঞ্জুরুলের নেতৃত্বে পুলিশ শোরুম থেকে টিটু ও মিলনের ২৫টি মোটর সাইকেল ফিল্মি স্টাইলে নিয়ে আসার সময় কয়েকটি গাড়ি তেল অভাবে বিকল হয়ে যায়। পরে তেল ভরে নিয়ে আসা হয় ডিবি অফিসে। টিটুর ব্যবহৃত মকবুলের কাছ থেকে প্রথমেই আটকে রাখা মোটর সাইকেলের তেলের ট্যাঙ্কির মুখ, স্টিকার, লুকিং গ্লাস, হর্ণ, ব্যাটারী ও শাড়ি গার্ড খুলে নেওয়া হয়।
বাস টার্মিনাল এলাকার বাসিন্দা টিটু জানান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজী আক্তার, কাজী ইকবাল, মোস্তফা, মাসুদ, সুলতানপুরের বাবু, রেজায়ান, মিস্ত্রী আফজাল, ও মা মোটরস এর মালিক ভাই জিল্লুর এর উপস্থিতিতে শোরুম থেকে তার ১৭টি গাড়ি বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি চ্যালেঞ্জ করলে তাকে কাগজপত্র নিয়ে ডিবি অফিসে যেতে বলা হয়। ডিবি অফিসে গেলে পরিদর্শক শাহারিয়ারের বরাত দিয়ে তাকে সন্ধ্যায় যেতে বলেন মঞ্জুরুল। একপর্যায়ে মিটার টেম্পারিং এর বিষয়টি স্বীকার করে মকবুল কিছু জানে না বলার পর মিলন ও মকবুলকে আবারো গারদে ঢোকানো হয়। এরপর ১৭টি গাড়ির কাগজপত্রের ফটোকপি দিয়ে তারা চলে আসার আগেই মকবুলকে ছাড়াতে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় তার স্ত্রী। কিন্তু এক লাখ টাকা ছাড়া ছাড়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন শাহারিয়ার। ওই দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়ায় অবস্থানকরাকালীন সহকারি উপপরিদর্শক জিয়া মোবাইল ফোনে তাকে (টিটু) ডিবি অফিসে যেতে বলেন। ভাই জিল্লুরকে নিয়ে সেখানে গেলে মোবাইল ফোন ও কাছে থাকা ৯০ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে সহকারি উপপরিদর্শক রাজু তাকে আটক করে গারদ ঘরে আটক করা হয়। পরে তার চোখ বেঁধে হাতে হ্যা- কাপ পরিয়ে শাহারিয়ারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন শাহারিয়ার। পরে তাকে গারদ ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। রাজুর সঙ্গে চুক্তির শেষ পর্যায়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা ও গাড়ি ছাড়ানোর জন্য তার কাছ থেকে আরো ২২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। পরদিন সকালে ১৮টি গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে ১০ এপ্রিল দিবাগত রাত দু’ টোর দিকে তাকে (টিটু) ছেড়ে দেওয়া হয়। ১১ এপ্রিল বিকেলে স্ত্রী ও ভাগ্নের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে পরদিন ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে মকবুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পহেলা বৈশাখের পরের দিন সন্ধ্যায় গাড়ি ফেরৎ দেওয়ার কথা থাকলেও বারবার তাকে ঘোরানো হয়। ওই দিন আরো ২০ হাজার টাকা দাবি করে ১০ হাজার টাকা নেন মঞ্জুরুল। ১৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার দিকে আরো ১০ হাজার টাকা নিয়ে পাঁচটি গাড়ি, ১৯ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে চারটি ও আরো ১০ হাজার টাকা নিয়ে ২৩ এপ্রিল চারটি ও ২৪ এপ্রিল দুপুরে দু’টি গাড়ি দিয়ে দেওয়া হয়। ১২ এপ্রিল তার দু’িট গাড়ি ও মিলনের একটি গাড়িসহ মিলনকে একটি মিটার টেম্পারিং এর প্রতারনার মামলায় চালান দেওয়া হয়।
খালিদ হোসেন মিলন বলেন, গত বৃহষ্পতিবার তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে পরদিন থেকে এক লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা ফেরৎ নেওয়ার জন্য শাহারিয়ার ও মঞ্জুরুলের কাছে হাঁটতে থাকেন। কয়েকজনের তদ্বিরের পর সহকারি উপপরিদর্শক রাজুর সহায়তায় সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার সাতটি গাড়ি ফেরৎ দেওয়া হয়। টাকা চাইলে আবারো নতুন মামলায় চালান দেওয়ার হুমকি দেন মঞ্জুরুল হাসান ও শাহারিয়ার।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ২৩ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে কালিগঞ্জেন রতনপুরের ব্যবসায়ি মন্টু ও তার সহযোগি একটি পুরাতন মোটর সাইকেল বিক্রি করে অন্য একটি কেনার জন্য ইজিবাইকে টাউন বাজার যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে স্টেডিয়াম ব্রীজের কাছ থেকে শাহারয়িার টিমের সদস্যরা তাদেরকে আটক করে হাত কড়া পরিয়ে ডিবি অফিসে নিয়ে এসে তাদের কাছে থাকা দেড় লাখ টাকা নিয়ে নেয়। পরে এক ইউপি সদস্যের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে এক পত্রিকা সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে শাহারিয়ারে বাক বিত-া হলে টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়। একই দিনে বুধহাটার এক ব্যবসায়ি তার ইউপি সদস্যের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের সোর্সদের দিয়ে বিত্তশালীদের বাড়িতে বা সার্চ করার নামে জামাপ্যান্টের পকেটে হাতের আঙুলের ফাঁকে রাখা মাদক দিয়ে ধরানোর কোন বিকল্প নেই।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, শাহারিয়ার তার ভাই সাতক্ষীরার ফায়ার সার্ভিসে কাজ করা ও নানার বাড়ি তালায় হওয়ার সুবাদে সাতক্ষীরায় পড়াশুনা করেছেন। বৈচিত্রময় পাঞ্জাবী পরে তিনি আটককৃত প্রায় নিরীহ ব্যক্তি ছাড়াও মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের চোখ বেঁধে ও হাতে হ্যা-কাপ পরিয়ে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে আটককৃতদের মোবাইল থেকে আটককৃতদের দিয়ে তাদের স্বজনদের মোবাইল করে লাখ লাখ টাকা আদায় করার ব্যাপারে সিদ্ধ হস্ত। ২ এপ্রিল সন্ধ্যার পর সাতক্ষীরা মোটরস্ এর মালিক জাকির হোসেন বানিকে তার বাড়ির পাশ থেকে আটক করে পকেটে এক পুরিয়া গাজা পাওয়ার অভিাযোগে জেলা জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার মাধ্যমে গভীর রাতে দেড় লাখ টাকা আদায় করেন শাহারিয়ার। বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কোন অনুমোদন ছাড়াই নামমাত্র অভিযোগ পেলেই তুলে এনে চোঁখ বেঁধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মোটা টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমদানি হয়না এমন পালচার ২২০ সিসি গাড়ি ফ্রি স্টাইলে চালিয়ে বেড়াচ্ছেন শাহারিয়ার। সহকারি উপপরিদর্শক রাজু ডিবি অফিসের সামনে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ডিসকভার ১৩৫ সিসি গাড়ি যার রেজিঃ নং- সাতক্ষীরা-ল-১১- ১৬৭৫ (চেসিস নং-এমডি-২০৩ জে ডবল জেডএসডিএ ৫১৯৮২, ইঞ্জিন নং- জেএনজেবিএসএ-০৪৭৩৩) নিজে ব্যবহারের জন্য খুলনা রোড়ের মোড় এলাকার জনৈক আফজাল মিস্ত্রির কাছে গত ২২ এপ্রিল সকালে রিপেয়ার করতে দিয়েছেন। এজন্য প্রথম দফায় তিনি ১০ হাজার টাকার খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে দিয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আইন শৃঙ্খলা মাসিক সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, বর্তমান পুলিশ সুপার আসার পর পুলিশের দূর্ণীতি ৮০ ভাগ থেকে কমে ২০ ভাগে নেমে এসেছে। তাবে তারা বাস্তবতা কতটা জানেন তা ডিবি পুলিশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হলেই জিহ্বা কাটবেন।
জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহারিয়ার সাংবাদিকদের জানান, খালিদ হোসেন মিলন একজন মিটার প্রতারক। তার কাছ থেকে এক লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যেয়ে বলেন, তাকে ছেড়ে না দিয়ে দু’ থেকে তিন দিন পর জামিনে মুক্তি পেতে পারে এমন মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হয়। তবে মকবুল ও টিটুর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা এড়িয়ে যেয়ে বলেন, অপরাধীরা নানা অপপ্রচার করে তাদের ভাল কাজকে কলুষিত করছে। তার টিমের সদস্যরা ভাল কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি।

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি


জলবায়ু পরিবর্তন