মো. মুশফিকুর রহমান রিজভি: একটু বৃষ্টি শুরু হলে কিংবা একটু জোরে বাতাস হলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ সংযোগ। পৌরসভায় মাঝে মাঝে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা দেখা গেলেও ইউনিয়নের অবস্থা আরো বেগতিক। একবার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলেই ১০-১২ ঘণ্টা আর বিদ্যুতের দেখা মেলে না।
গত ১ এপ্রিল সন্ধ্যার পর আকাশ একটু মেঘাচ্ছন্ন সাথে একটু জোরে বাতাস হতেই বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। জেলার পৌরসভার আওতাভুক্ত এলাকায় রাতে কয়েকবার বিদ্যুৎ লুকোচুরি খেলা করলেও স্থায়ীভাবে থাকেনি বেশিক্ষণ।
অন্যদিকে ইউনিয়নগুলোতে সন্ধ্যার পরেই বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। পরে সারা রাত আর দেখা মেলেনি বিদ্যুতের। বিদ্যুতের দেখা মিলেছে পরদিন (২ এপ্রিল) সকাল ৯ টার পর।
এব্যাপারে বিদ্যুৎ অফিস সংশ্লিষ্টদের মত, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে বিভিন্ন স্থানে লাইনের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল। সেগুলো মেরামত করে সংযোগ পুনরায় চালু করতে গিয়ে দেখা দিয়েছে এ বিদ্যুৎ বিভ্রাট। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যাতিত অন্য সময়ে নিয়মিত লোডশেডিং এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তাদের মন্তব্য, এখন আর আগের মত বেশি লোডশেডিং হয় না। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ একটু কম থাকার কারণে এরূপ লোডশেডিং হয়।
কিন্তু জনসাধারণের বক্তব্য ভিন্ন, তারা বলছেন, গ্রীষ্মকাল আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেছে লোডশেডিং। বিদুতের এমন লুকোচুরি খেলায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলাবাসীকে। গত ১ এপ্রিলের এরূপ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে এইচ.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এইচ.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষার আগের দিন এরূপ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি।
এব্যাপারে এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী নাজরাণ হোসেন রকি বলেন, সারা রাত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কাক্সিক্ষত পরীক্ষা প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়েছি। আরেক পরীক্ষার্থী তাজিম হাসান শাওন বলেন, চার্জার লাইটে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কিন্তু চার্জার লাইটের চার্জ ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যা থেকেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পরীক্ষা প্রস্তুতি সন্তোষজনক হয়নি।
বিদুতের এমন লুকোচুরিতে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রেস ব্যবসায়ী, কলকারখানা, বেকারীসহ সকলপ্রকার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনসাধারণ। এমন লোডশেডিং এর কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা খাদ্যদ্রব্য।
এব্যাপারে কদমতলা বাজারের ব্যাবসায়ী আশরাফুজ্জামান বলেন, সামান্য মেঘ-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমাদের ব্যাবসায়ীদের জেনারেটরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নকে তরান্বিত করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাট সরকারের সকল উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ সরবারাহ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের কাছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১ এপ্রিল প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িক বন্ধ ছিল। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকলেও প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। বিদ্যুৎ সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকার কারণে সৃষ্টি হয় এরূপ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের।
রাতভর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার ব্যাপারে কালিগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তুষার কান্তি মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যাতিত অন্য সময়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো লোডশেডিং থাকেনা। পিক আওয়ারে সামান্য লোডশেডিং থাকে।
গত ১ এপ্রিল রাতের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন ঝাউডাঙ্গা বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান। তার মতো পাটকেলঘাটা বিদ্যুৎ অফিসের জেনারেল ম্যানেজারও প্রাকৃতিক দূর্যোগকে দায়ী করছেন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য। নিয়মিত লোডশেডিং এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, লোডশেডিং এখন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এ লোডশেডিং এর পেছনে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দায়ী কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ একটু তো কম আছেই। তবে এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট অনেক কমে গেছে।
Leave a Reply