1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ০৫:১৮ অপরাহ্ন
২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
Latest Posts

সিরাম না

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮
  • ৬২১ সংবাদটি পড়া হয়েছে

ছায়েদ বিশ্বাসের তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলের নাম সুখচাঁন। ছোটছেলে বিধায় অতি আদরের কিন্তু সবার ধারণা সে পাগল। এই পাগল ভাবার কারণ- সুখচাঁনের কাছে তারা কয় ভাই জিজ্ঞাসা করলেই বলে, আব্বার দিয়ে আমরা চার ভাই। সুখচাঁনের একটাই কাজ সারাদিন ঘুরে বেড়ান।
আশির দশকে মদনপুর গ্রামে প্রতিবছর যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ, ম্যাজিক দল নিয়ে আসতো। উদ্দেশ্য ছিল মদনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন সাধন। স্কুলের উন্নয়ন না হলেও কিছু লোকের পকেট ভারি হতো। এসব তথ্য সুখচাঁনের জানার কথা না। সেই বয়সও তার হয়নি। প্রতিবাদি মেধাও সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে সে বঞ্চিত। তবে সুখচাঁন খুব আনন্দ পেত। সারাদিন প্যান্ডেলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে সুন্দর সময় পার হতো। একবার সার্কাস পার্টি এলে সুখচাঁনের আনন্দ আরও বেড়ে গেল। বানর, বাঘ, ভালুক আরও কত কি এসেছে। একটা মস্ত বড় হাতি এসেছে। দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হয় ছোটখাট একটা কালা পাহাড়। সকালবেলা হাতি আশপাশের পাড়াগায়ে গামালে (বেড়াতে) যায়। হাতি দেখে গ্রামের লোক ধান, চাল, টাকা-পয়সা দেয়। কলাগাছ ফ্রি, হাতি যত খেয়ে পারে। কেউ বাঁধা দেয় না; বরং খুশি হয়। সুখচাঁন সারাদিন হাতির পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়ায়। পনের দিনের একদিনও সে ঘুরতে মিস করিনি বরং সার্কাস পার্টি চলে যাওয়ার সময় সুখচাঁন খুব কষ্ট পেয়েছিল। অনেকদিন যাবৎ অনেকের কাছে তার দেখা বিশাল হাতির বর্ণনা দিয়ে তৃপ্তি বোধ করেছে।
সুখচাঁনের কাছ থেকে ধীরে ধীরে শৈশব কৈশোর বিদায় নিয়েছে। অকর্মণ্য শরীরে যৌবন এসেছে। বড় দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। মা-বাবার দুশ্চিন্তা তাদের মৃত্যু হলে পাগল সুখচাঁনের কি হবে। কেউ কেউ পরামর্শ দিল সুখচাঁনের বিয়ে দাও। কলে পড়লে সব পাগলামি ছুটে যাবে।
সুখচাঁন বিয়ে করল কিন্তু সংসারী হল না। এর মধ্যে তার বাবা মাও পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। সুখচাঁন বাবাও হয়ে গিয়েছে। এবার কলে পড়ে রিকসা-ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরতে হল। পাগলামিও কিছুটা ছুটে গেল।
সুখচাঁন বেশ বুড়িয়ে গিয়েছে। গ্রামের বাজারে ভ্যান নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকে। যাত্রী খোঁজার থেকেও চলমান মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে। হাসির অর্থ বুঝা মুশকিল।
ফাগুনের প্রথম দিকে গ্রামময় হৈ চৈ পড়ে গেল মুড়াগাছা বাজারে সার্কাস পার্টি এসেছে। খবর শুনে সুখচাঁনের ছোটবেলার ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। একদিন ভ্যান না চালিয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেল। সারাদিন সার্কাস প্যান্ডেলে ঘোরাঘুরি করল। একটা হাতি এসেছে কিন্তু হাতি দেখে সুখচাঁনের মন ভরল না। হাতিটা রোগা, দূর্বল, আয়তনে খুব ছোট। কেউ এখন আর কলাগাছ ফ্রি দেয় না। এককাঁদি কলার দাম শতশত টাকা। কে দেবে?
শেষ বিকেলে সুখচাঁন মদনপুর বাজারের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফিরছে। বাজারে চায়ের দোকানে বহুলোক। সেখান থেকে হোসেন আলি সুখচাঁনকে ডাক দিল। কোথায় গিয়েছিল জানতে চায়লো। সুখচাঁন বলল, মুড়াগাছায় সার্কাস প্যান্ডেলে গিলাম।
হোসেন বলল, হাতি দেখিছিস?
সুখচাঁন বলল, দেখিছি তবে সিরাম ( সেই রকম ) না।
হোসেন বলল, সিরাম না মানে?
সুখচাঁন একগাল হাসল। হাসিতেই বুঝা গেল শৈশবে যে হাতি মদনপুর গ্রামের সার্কাস প্যান্ডেলে এসেছিল সে তুলনায় এ হাতি যেন মরা হাতি। এখন সুখচাঁনের যে যেখানে দেখা পায় সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে- ‘সিরাম না।’
সুখচাঁনের কথাটা মানুষের কাছে জীবন্ত হয়ে গেল। এখন এলাকায় তুলনামূলক ভাল কিছু না হলে একগাল হেসে বলতে শুনা যায়-সিরাম না।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2025
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd