সেলিম হায়দার: তালায় আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে বোরোর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। শেষ সময়ের অনাবৃষ্টি ও ঘাতক ছত্রাক ব্লাস্টের আক্রমণে এ বছর বোরো উৎপাদনে দেখা দিয়েছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা। এবছর শুরুতে পরিবেশ ভাল থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬ শ’ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়। কিন্তু ছত্রাক ব্লাস্টের আক্রমণে এখন লক্ষ্যমাত্রা অপূর্ণ থাকার সংশয় দেখা দিয়েছে।
তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবছর তালা উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৪ শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে গতবার বাজার মূল্য ভাল থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৭৫ হেক্টর বেশি পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ করেন কৃষকরা। এ বছর প্রথম থেকে আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকায় কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও ধারণা করেছিল এবার তালায় বোরোর বাম্পার ফলন হবে। তবে উৎপাদন মৌসুমের শেষ সময়ে অনাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার সাথে ঘাতক ছত্রাক ব্লাস্টের আক্রমণ সবার সব ধারণা পাল্টে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষক ও কৃষি বিভাগ পরষ্পরকে দোষারোপ করছেন। কৃষি বিভাগ বলছেন, ব্লাস্টের ব্যাপারে তৃণমূলের কৃষকদের আগেই সচেতন করা হয়েছিল। আর কৃষকরা বলছেন, ব্লাষ্টের পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের থাকলেও এবারের আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষে তৃণমূলের কৃষকদের সচেতনতায় বিশেষ কোন পরামর্শ দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শামছুল আলমের কাছে বর্তমান পরিস্থিতিতে তালার বোরোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জণে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই কিছুটা ক্ষতি হবে। যেখানে বিঘা প্রতি তাদের পক্ষে ২০ মণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এখন ১৪/১৫ মণ উৎপাদন হবে। এ ব্যাপারে তালার ইসলামকাটির প্রদীপ ঘোষ, হাতবাশের নজরুল ইসলাম, পাঁচরখির কালাম হোসেন, বারুই হাটির সাত্তার সরদার জানান, নানা সংকটে শেষ সময়ে বোরো ধানের উৎপাদন হ্রাসের আশক্সক্ষা তাদের মধ্যে মারাতœকভাবে জেঁকে বসেছে। কোন কোন এলাকায় ধানের উৎপাদন খরচ না উঠারও আশক্সক্ষা করা হচ্ছে। এজন্য প্রতিকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি তারা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কোন কোন এলাকায় সার ব্যবসায়ীদেরকেও দায়ী করেছেন। বিশেষ করে কৃষি বিভাগের পক্ষে প্রচারকৃত লিফলেটের সার-ওষুধের পরিবর্তে মুনাফালোভী দোকানীরা কৃষকদের নি¤œমাণের সার-ওষুধ ধরিয়ে দেয়ার বিষয়টিকেও দায়ী করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা শামছুল আলম আরো জানান, ঘাতক ছত্রাক ব্লাস্ট ধানের শীষ শুকিয়ে দেয় এবং ধান কাটার পর এতে চিটার পরিমাণই বেশী হয়।
নাব্যতা সংকটে পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকায় বছর জুড়ে থাকে পানি বন্দি। তাই জীবিকার একমাত্র মাধ্যম এক খ- জমিতে একমাত্র বোরো ধানের আবাদ তৃণমূলের কৃষকদের বেঁচে থাকার আশা জোগায়। তবে এবার নানামূখী সংকটে অধিকাংশ কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। মৌসুমের চলতি এপ্রিলে মাঠে ধান পাঁকতে শুরু করেছে। কোন কোন এলাকায় কেবল ভারী হয়েছে শীষ। এমন অবস্থায় নানা সংকট উৎপাদনকে বাঁধাগ্রস্থ করায় রীতিমত বপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
তৃণমূলের কৃষকরা জানান,প্রতি বিঘা জমি ১০ হাজার টাকায় হারি নিয়ে ধান চাষ করতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অনেকে আবার মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সূদে ঋণ কিংবা এক মাত্র সম্বল গবাদি পশু,গাছ বিক্রি বা স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে ধান চাষ করায় রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
Leave a Reply