ডেস্ক রিপোর্ট: আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার চেয়ে অপবাদমুক্ত থাকার ওপর জোর দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ফলে সিটি নির্বাচনে যেনতেন বিজয় ঘরে তুলতে চান না ক্ষমতাসীনরা। স্থানীয় এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি রক্ষা করতে চান দলটির নীতি-নির্ধারকরা। তাই জয়-পরাজয়ের কথা না ভেবে অপবাদ যাতে ঘাড়ে এসে না পড়ে, তা-ই সুনিশ্চিত করতে চান তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো এমনই আভাস দিয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, অপবাদমুক্ত থাকতে চায় বলেই দুই সিটিতে ‘উইনিং’ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এ ধরনের প্রার্থীই খুঁজে বের করা হবে। আগামী রবিবার (৮ এপ্রিল) স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড তেমন প্রার্থী খুঁজে বের করবে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। ওইদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়া হবে।
সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আমরা হেরেছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেখানে আমরা বিজয়ী হয়েছি।’ ওই নেতা বলেন, ‘এতে করে আমাদের যেমন সমস্যা হয়নি, সরকারকেও বেকায়দায় পড়তে হয়নি। এই দুটি সিটি নির্বাচনেও আমাদের অবস্থান এবং কৌশল থাকবে একই রকম।’
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘দুই সিটিতে নির্বাচনের কৌশল হবে জিতে হারা নয়, হেরে গিয়ে যদি জেতা যায় আমরা সেই চেষ্টাই করবো। কোনও অপবাদ নিয়ে জিতবো না! অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। এর মধ্য দিয়ে জিতে আসতে যা যা করণীয় আওয়ামী লীগ তা করবে। তবে অপবাদ নিয়ে জয় নয়।’
সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক নেতা দাবি করেন, খুলনা সিটিতে সরকার যে উন্নয়ন সাধন করেছে, তাতে খুলনায় নৌকা জিতবে বলে মনে করছি। আর গাজীপুর নৌকার ঘাঁটি, সেখানে নৌকার বিজয় কঠিন কিছু হবে না।
ওই নেতা বলেন, ‘ভোটারদের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হলে নৌকা ঠেকানো যাবে না এ দুই সিটিতে।’
নৌকার ঘাঁটি বলা হলেও গতবার গাজীপুরে কেন নৌকা পরাজিত হলো জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘গতবার সিটি হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি পায় গাজীপুর। সবকিছু ভালো করে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনের আগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা করে, তাতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে তারা, যা ওই নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। এর বাইরে বিএনপি ওই নির্বাচনে অনেক টাকা ছড়িয়েছে। ওই তুলনায় আমরা পরিকল্পিত ছিলাম না। গতবার গাজীপুর নির্বাচনে আওয়াজের ওপর ছিলাম কেবল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের এসব নেতা এবার নৌকার প্রার্থী জেতার বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তরুণ ভোটারদের; তারা ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এই তরুণ ভোটাররা সন্তুষ্ট বলে তাদের মত। ফলে তরুণরা এবার নৌকার প্রার্থীর ওপর আস্থা রাখবে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হয়তো অনুপস্থিত থাকবেন। কারণ, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড পেয়ে তিনি কারাগারে আছেন। তার মুক্তির বিষয়টিও অনিশ্চিত। ফলে খালেদাবিহীন নির্বাচন ও প্রস্তুতি বিএনপির জন্য একটি বড় জটিলতা তৈরি করবে। বিএনপিতে সেই মানের নেতার সংকট রয়েছে, যারা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন। তাই খালেদার এই অনুপস্থিতি দুই সিটির ভোটের আগে বিএনপির জন্য ‘মাইনাস’ পয়েন্ট, আর এটাই হলো আওয়ামী লীগের জন্য ‘প্লাস’ পয়েন্ট।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করাই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। জয়-পরাজয়কে সরকার যেমন প্রাধান্য দিচ্ছে না, তেমনি আওয়ামী লীগও প্রাধান্য দিচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘দুই সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ চায় অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। আমরা মানসম্পন্ন নির্বাচন নিশ্চিত করে বিজয়ী হতে চাই।’
Leave a Reply