যেভাবে সমঝোতা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে


এপ্রিল ৯ ২০১৮

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্ট: আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিফিং করছেন ওবায়দুল কাদের (ছবি- পিআইডি)সরকারি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়েছে। সেই অনুযায়ী, আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাকে ইতিবাচক মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। তরুণ প্রজন্মের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী সবসময় আন্তরিক— সরকারের পক্ষ থেকে এমন বার্তাও আন্দোলনকারীদের সমঝোতায় যেতে প্রভাবিত করেছে। এছাড়া, রবিবার মধ্যরাতে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের সময় উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনাও সমঝোতার পথ সহজ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে রবিবার (৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে শাহবাগে অবস্থান নিতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। রাত পৌনে ৮টার দিকে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার পর সারারাত ধরেই ঢাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে রবিবার মধ্যরাতেই সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাবি ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দেন আন্দোলনকারীদের। সোমবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় বিকাল সাড়ে ৪টার পর।
সচিবালয় থেকে ফেরার পর বক্তব্য রাখছে প্রতিনিধি দল, তাদের বক্তব্য মানতে নারাজ আন্দোলনকারীরাআন্দোলনকারী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশই মূলত সমঝোতাকে ত্বরান্বিত করেছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সরকারের সিনিয়র কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বিশেষ ব্ঠৈক করেন। পরে তিনি বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির বিষয়ে অধিকতর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। আন্দোলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ ইতিবাচক মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরপরই আন্দোলনকারীদের বিষয়টি জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে আন্দোলনকারীদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে, আন্দোলনকারীরা প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন, তারাই দেশের নতুন প্রজন্ম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় এই নতুন প্রজন্মের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাদের যৌক্তিক দাবির প্রতিও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক।
এদিকে, রবিবার রাতে আন্দোলনকারীরা যখন পুলিশের উপর্যপরি টিয়ারশেলের মুখে ঢাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছত্রভঙ্গ, সেই সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক সরকারের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেন আন্দোলনকারীদের। নানক জানান, ওবায়দুল কাদেরকে এই বৈঠকের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়গুলো আন্দোলনকারীদের উৎসাহ জুগিয়েছে। পাশাপাশি রবিবার মধ্যরাতে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে মুখোশধারীদের হামলা খানিকটা ভীতিও ছড়িয়েছে। এই বিষয়গুলো সমঝোতার পথ সহজ করেছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী নেতাদের কয়েকজন।
রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড আন্দোলনকারীদেরসোমবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ আন্দোলনের ফলে রাজধানীর শাহবাগসহ আশপাশের রাজপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রোগীরা যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে যাওয়া-আসায় সমস্যা হচ্ছে। অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমন সব হয়রানির মধ্যে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে আন্দোলনকারীদের আত্মীয়রাও থাকতে পারেন। মন্ত্রী এভাবে বিষয়গুলো বোঝালে তা আন্দোলনকারীদের মনে দাগ কেটেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসা কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেহেতু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রাখবেন। তার প্রতি আমাদের এই বিশ্বাস রয়েছে। তাই আমরা সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি।’
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের মধ্যে থাকা একজন নেতা বলেন, ‘দীর্ঘ আন্দোলন করা তো আমাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের দাবি আদায় হওয়াটাই মূল বিষয়। প্রধানমন্ত্রী তার দলের সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি, আমাদের দাবি পূরণ হবে। সব মিলিয়ে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ আমাদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে বলেই আমরা সমঝোতায় এসেছি।’
যদিও, সমঝোতার এই সিদ্ধান্ত ঢাবি টিএসসিতে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা মেনে নিতে রাজি হননি। বৈঠক থেকে আন্দোলনকারী প্রতিনিধিরা সমঝোতা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরলেও ঢাবি টিএসসিতে অবস্থানকারী আন্দোলনকারীরা সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আন্দোলনকারীরা ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকা ছাড়েন। আন্দোলনকারীরা জানান, তারা আগামীকাল মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) সকালে ফের ক্যাম্পাসে জমায়েত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ৬ মার্চ কোটা সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, সরকারি নিয়োগে কোটায় কোনও পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে সেসব পদ মেধা তালিকার প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করতে হবে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এর ব্যখ্যা দিয়ে ৫ এপ্রিল আরেকটি পরিপত্র জারি করা হয়। ওই পরিপত্র ঘিরেই দানা বাঁধে আন্দোলন, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে রাজপথে।
ফাঁকা টিএসসি, রাত সাড়ে ৯টার চিত্র (ছবি- সাজ্জাদ হোসেন)৫ এপ্রিলের পরিপত্রে বলা হয়— প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলোতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের ৫ মে জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী কোনও জেলায় বিতরণ করা পদের সংখ্যার তুলনায় যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা কম হলে ওই বিশেষ কোটার অপূর্ণ পদগুলো জাতীয়ভিত্তিক নিজ নিজ বিশেষ কোটার (অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ) জন্য প্রণীত জাতীয় মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত অনুসরণের পর সংশ্লিষ্ট নিয়োগের জন্য নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার কোনও কৃতকার্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো অবশিষ্ট কোটা অর্থাৎ জেলার সাধারণ প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করিতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করার পরও কোনও বিশেষ কোটার পদ পূরণ করা সম্ভব না হলে সেসব পদ জাতীয় মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।
পরিপত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়— এসব নিয়োগে কোনও বিশেষ কোটার (মুক্তিযোদ্ধা, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা সদস্য) কোনও পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে তা জেলার প্রাপ্যতা অনুযায়ী সাধারণ প্রার্থীদের মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।
এই পরিপত্রের সরকারি নিয়োগে কোটার বিধি নিয়েই অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে। পরে তা থেকেই শুরু হয় কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ও বিক্ষোভ।

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি


জলবায়ু পরিবর্তন