নিজস্ব প্রতিবেদক: মহান স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা গাইড বই বাজারজাত করতে সাতক্ষীরায় আসছেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। ওই প্রতিনিধি দলের সাথে সফর সঙ্গী হিসাবে আসছেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা মমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ঢাকার বিএনপি নেতা কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুল।
কয়েকজন পুস্তক ব্যবসায়ী জানান, কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুল ঢাকা মহানগরের সূত্রাপুুর থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং ২০১৩-১৪ সালে সুত্রাপুর থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতার অভিযোগ থাকায় তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। কিন্তু তিনি পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটনের আর্শীবাদ পুষ্ট হওয়ায় নাশকতার আসামি হয়েও বুলবুল কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মনোনীত হন। দায়িত্ব পাওয়ার পরে বুলবুল স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী প্রকাশনীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সারা বাংলাদেশব্যাপি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ নোট-গাইড সহায়ক পাঠ্য বইয়ের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
২০১৬-২০১৭ ও ২০১৮ সালে সারা বাংলাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতেও তার আর্শীবাদ পুষ্ট পুস্তক ব্যবসায়ীরা তার কথামত জেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পাঠ্য তালিকায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বই অন্তর্ভুক্ত করে আসছেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেরুয়াারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবির্ক) মো. জাকির সাতক্ষীরায় অসাধু পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের স্বাধীনতা বিরোধী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বই বাজারজাত বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সাতক্ষীরার পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির বর্তমান আহবায়ক যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় অন্যতম প্রধান আসামি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের আপন ভাইপো ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম বাবু ও যুগ্ম আহবায়ক(১) বিএনপি-জামায়াত পন্থী কাইয়ুম সরকারকে চিঠি দিয়ে অবগত করেন।
কিন্তু এখনও জেলার পুস্তক ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এই বই বাজারজাত করে ক্রয়-বিক্রয় অব্যাহত রেখেছে। আর তাদের ওই স্বাধীনতা বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বই বাজারজাত করতে সার্বিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরায় আগমন করছেন বিএনপি নেতা বুলবুল।
অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি নেতা বুলবুল সাতক্ষীরার উর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে ওই সব গাইড জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্য তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার তদবির নিয়ে আসছেন। আর এ কারণে তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সংঘস্মারক ও সংঘবিধির ১৩ ধারা মোতাবেক সদস্য পদের অযোগ্যতা। জ) কোন প্রকাশনী ও পুস্তক ব্যবসায়ী টাকার বিনিময়ে বই পাঠ্য করাইলে তার সদস্য পদ থাকবে না। ট) গ্রন্থসত্ত্ব আইন: রাষ্ট্রবিরোধী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বই প্রকাশ ও বিক্রয় করিলে। কিন্তু সারা দেশব্যাপি প্রকাশকরা টাকার বিনিময়ে স্কুল, কলেজ মাদ্রাসায় বই পাঠ্য করায়। ফলে সংঘবিধি ১৩ জ ও ১৩ ট অনুযায়ী কোন প্রকাশনীর সদস্যপদ থাকার কথা না।
এঘটনায় কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আগে বিএনপি করতাম। এখন করি না।’ ১৩’র জ ও ট সম্পর্কে বললে তিনি এড়িয়ে যান। এঘটনায় সাতক্ষীরার পুস্তক ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে, সাতক্ষীরার কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে স্বাধীনতা বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোন বই পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জেলার সচেতন মহল।
Leave a Reply