এসবিনিউজ ডেস্ক : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দক্ষ, সৎ, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ব্যাক্তিদের নাম সুপারিশ করার জন্য রাষ্ট্রপাতির গঠিত সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সার্চ কমিটির সদস্যরা সোমবার বিকালে ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে তাদের মতামত শোনেন।
সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সোমবার বিকাল ৪টা থেকে দুই ঘণ্টা তাদের এই বৈঠক চলে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “উনারা আজ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলোর রেকর্ড নিয়েছি। তারা প্রত্যেকেই সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসাবে সৎ, দক্ষ, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ব্যক্তিদের বাছাই করার পরামর্শ দিয়েছেন।”
সার্চ কমিটির কার্যক্রমে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেই সূত্রে এ বিভাগের সচিব নিজেও সার্চ কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সার্চ কমিটির আমন্ত্রণে হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এসএমএ ফায়েজ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আইনজীবী সুলতানা কামাল এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন, এম সাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক তোফায়েল আহমদ, সুশাসনের জন্য্ নাগরিকের (সুজন) নির্বাহী বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ও সাবেক পুলিশ মহা পরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা অংশ নেন এই আলোচনায়।
বৈঠক শেষে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা কোনো নাম প্রস্তাব করেননি।
“আমরা বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। আশা করি, সার্চ কমিটি নতুন ইসি গঠনে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবে।”
সাখাওয়াত বলেন, ইসি গঠনের কিছু মানদণ্ড তারা সার্চ কমিটির সামনে তুলে ধরেছেন।
“এমন লোকটিকে নির্বাচন করতে হবে, যাকে দেখে মানুষ প্রথমেই বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন, নিরপেক্ষ বিবেচিত ব্যক্তিদের বাছাই করতে হবে।”
সুলতানা কামাল বলেন, “একটা কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এখানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছি। সার্চ কমিটির নিজস্ব একটা কর্মপদ্ধতি আছে। কারা কমিশনে যাবে বা না যাবে- সেই নাম প্রস্তাব করার দায়িত্ব সার্চ কমিটির। আমাদের সাথে তাদের মত বিনিময় ছিল মানুষ কোন ধরনের ব্যক্তিদের কমিশনে দেখতে চায় সে বিষয়ে।”
তিনি জানান, সাংবিধানিক দায়িত্ব যারা সততা, স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার সঙ্গে পালন করতে পারবেন- তেমন ব্যক্তিদের যাতে সার্চ কমিটি খুঁজে নিতে পারে- সে বিষয়ে তারা মতবিনিময় করেছেন।
“নির্বাচন কমিশনে আমরা এমন ব্যক্তি দেখতে চাই, যে বা যারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে। তারা হবেন সৎ, দক্ষ ও উপযুক্ত এবং তারা মনে করবেন তাদের একটা নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। এটা কোনো সুযোগ সুবিধার ব্যাপার না। একটা বিরাট বড় জাতীয় দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।”
সার্চ কমিটি নিয়ে একটি দলের আস্থার সঙ্কটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, “কিছু মানুষের আস্থার সঙ্কট আছে, কিছু মানুষের নেই। শুধু আস্থার সঙ্কটের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে সামনে এগোনো যাবে না। আজ সার্চ কমিটি হয়েছে, এতোদিন ধরে আস্থার যে সঙ্কট ছিল তার কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে।
“আমি মনে করি, তারা অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। দীর্ঘদিন ধরে তারা যোগ্যতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আস্থা আনাটা জনগণেরও নৈতিক দায়িত্ব। ইসি বা সার্চ কমিটি কিন্তু নির্বাচন ভণ্ডুল করে না; নির্বাচন যদি অস্বচ্ছ হয় তার জন্যে দায়ী থাকে রাজনৈতিক দলগুলো।”
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, সার্চ কমিটি প্রথমবারের মত কিছু নাগরিকের সঙ্গে বসেছে, সেখনে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতামত তুলে ধরেছে।
“আমরা কিন্তু আগে আলোচনা করে একমত হইনি। কেউ কেউ লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে, সার্চ কমিটিকে যেটা সুপারিশ করেছে সেটা হচ্ছে একটা ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে উনারা সিলেকশন করবেন, আরেকটা হচ্ছে সিলেকশন যেটা করছেন তার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখুন, তাতে মানুষের আস্থা বিশ্বাস বাড়বে।
“সিলেকশনের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠিগুলো তারা বসে চিন্তা করবেন, আমরা কিছু চিন্তার খোরাক দিয়েছি। আজ যে জিনিসগুলো দেওয়া হয়েছে, তারা অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তারা নিজেরা বসে এগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করে কিছু একটা দাঁড় করাবেন।”
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “ইসি গঠনে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা উচিত। সময় লাগলেও আইন করে নতুন ইসি নিয়োগ দেওয়া উচিত হবে।”
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকও একই ধরনের সুপারিশ দিয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও এস এম এ ফায়েজ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।
নতুন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচটি করে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি। মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এই তালিকা দিতে হবে।
দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নাম যাচাই-বাছাই করে সার্চ কমিটি ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দেবে। তাদের সুপারিশ থেকেই অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে এই সার্চ কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।
Leave a Reply