
আবু হাসান
‘ক্ষিদে’ খুব ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু এর মাঝে লুকিয়ে আছে পুরো সভ্যতা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে?
আজকে এই ‘সভ্যতা = ক্ষিদে’ কিভাবে তা প্রমান করার চেস্টা করি।
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী তৈরি করেছেন, সাথে তার ইবাদত করার জন্য তৈরি করেছেন মানুষ। আর মানুষের কল্যনে পুরা পৃথিবী সাজিয়ে দিয়েছেন তিনি। তারই সিস্টেম অনুযায়ী সবকিছু এটি চেইন বা শিকলের মাধ্যমে চলে। মানুষের বেঁচে থাকর জন্য প্রয়োজন খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।
কিন্ত একটা জীবের বেঁেচ থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্য, বাসস্থান, ও চিকিৎসা । বস্তুত এই তিনটা চাহিদাই হলো মানুষের মৌলিক চাহিদা বাকি দুইটা সভ্যতা। বিভিন্ন ইতিহাস থেকে জানা যায় পৃথিবীতে এমন একটা সময় ছিল যখন মানুষ খাবার ছিলো বনের পশু, নদীর মাছ, ফল-মূল, নদ-নদীর পানি, ইত্যাদি কিন্তু এই সভ্যতার যুগে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে এখন মানুষ বিজ্ঞনের বদৌলতে অনেক কিছু শিখে ফেলেছে এখন তারা সভ্য হয়েছে, তারা এই ফল-মূলকে প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন সভ্য খাবার তৈরি করে এগুলা মাানুষের শিক্ষার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। অনুরূপ ভাবে বিগত সময় মানুষ উলঙ্গ থেকে গাছের পতা, পশুর চামড়া এগুলো পরিধান করে তাদের লজ্জাস্থান সুরক্ষিত করত; বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ এখন গাছের পাতা থেকে, গাছে বসবাসকৃত পোকা থেকে সুতা তৈরি করছে এবং সেই সুতো থেকে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের অত্যাধুনিক পোষাক বা কাপড় যার পিছনে লুকিয়ে আছে গোটা একটা সভ্যতা ।
সভ্যতার যুগে মানুষের আরও একটা বড় পরিবর্তন হলো বিনিময় বা পারশ্রমিক; এটার আরও একটা পরিচয় আছে যার সাথে আমরা সবাই খুবই পরিচিত আর সেটা হলো ‘টাকা’। তবে এই টাকা কে বা কারা কখন আবিষ্কার করেছেন তা হয়ত গুগলের (বিশে^ সর্ব বহুল প্রচলিত সার্চইঞ্জিন) ও সঠিক ভাবে জানা নেই কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা হলো মানুষের সর্বপ্রথম মৌলিক চাহিদা। বর্তমান বিশে^ প্রায় ৯৯.৯৯% বিনিময় প্রথা এই টাকা দ্বারা প্রচলিত।
এখন যদি আমরা একটু অগ্র-মস্তিস্কের সেরিব্রাম বা সেরিব্রাল কর্টেক্স এ চাপ দিই তাহলে দেখা যায় এই সবগুলো চাহিদা তখনই মানুষের প্রয়োজন হয় যখন তার ক্ষুধা লাগে। কিন্তু ক্ষুধা আসলে আমার কাছে কয়েক প্রকার যেমন: জৈবিক চাহিদার ক্ষেত্রে মানুষের যখন তার মৌলিক চাহিদার প্রয়োজন হয় সেটা হলো ক্ষুধা।
বাসস্থান বিহীন খোলা আকাশের নিচে, কনকনে শীতে রাস্তার ধারে, দোকানের পাশে, বিভিন্ন গলিতে শুয়ে থাকা, মানুষ গুলো ক্ষুধার্থ কারন তারা তাদেও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
আবার উইকিপিডিয়ার মতে, রাজনীতিতে, মানবিকতায়, এবং সামাজ বিজ্ঞানে, ক্ষুধা এমন একটি অবস্থা যাতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন ব্যক্তি মৌলিক পুষ্টিগত চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত খাবার খেতে অক্ষম।
কিন্তু এই ক্ষুধা ছাড়াও আরো একটা ক্ষুধা আছে সেটা আসলে ক্ষুধা না সেটা হলো আপাত দৃষ্টিতে ক্ষিদে; যা এই মহা সভ্যতার যুগে সভ্যসমাজের আদলে তৈরি হওয়া চাহিদা। এই ক্ষিদে আসলে পূরন হওয়ার নয়। বলতে গেলে এটা এ যুগের একমাত্র মৌলিক চাহিদা।
যে যত সচ্ছল সে ততই ক্ষুধার্ত যেমন : ছাত্রজীবনে কেউ দু-বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য সারাদিন স্কুল,কলেজ, ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা করার পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে বের হয় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে আবার কেও বাইক,গাড়ীর মডেল পুরাতন হয়ে গেছে নতুন গাড়ী নেওয়ার জন্য বাবা-মায়ের কাছে আবদার করছে। অন্য দৃষ্টিতে একজন দিন মজুর রাতে বালিশে বালিশে মাথা ঠেকিয়ে ভাবছে আজকে সারা দিনে ৩০০ টাকা আয় করে ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছে তাহলে কালকে কত টাকা আয় করলে মাছ জোগাড় হবে; আবার একজন ব্যাবসায়ী সোফায় হেলান দিয়ে ভাবছে গত বছর ব্যাবসায় ৫ টা শাখা থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার ইনকাম হয়েছে সাথে তার ২০ জন প্রতিদ্বন্দি কে পিছনে ফেলে আসছে তাহলে এ বছর কয়টা শাখা প্রতিষ্ঠান খুললে সে সবার সেরা হতে পারবে।
এছাড়াও আরো সহজ ভাবে দেখতে গেলে একটা নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়ের বছরে একবার অথবা দুইবার কাপড় কিনলে তাদের জন্য সেটা যথেস্ট তাদের ‘ভালো-খারাপ’ সেটা যায়-আসে না, চললে হলো। একই দৃশ্যপটে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ও বছরে এক থেকে দুইবার কাপড় কিনলে চলবে কিন্ত তাদের ব্রান্ড ভ্যালু ও কাপড়ের মান সবকিছু ভালো হওয়া লাগবে । ঐ একই দৃশ্যপটে একটা উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বছরে অনÍত ১০-১৫ বার কাপড় কেনা লাগে কারন তাদের তথাকথিত সভ্যতার সমাজে একটা স্থান আছে এক কাপড় বেশি বার পরলে তাদের মানসম্মানে বাধাগ্রস্থ হয়, তাদেও একটা ব্যান্ড ভ্যালু থাকে তাদের বিভিন্ন উচ্চ মানের বন্ধুবান্ধব-লোকজনের সাথে ওঠা-বসা এজন্য তাদের সমাজের নিয়ম মেনে চলতে হয়।
আপাত দৃষ্টিতে তিনটা উদাহরন তিন প্রকারের হলেও এদের প্রেক্ষাপট একই। আর এগুলোর পিছনে মূল কারন সভ্যতা।
তাই আমরা বলতে পারি যে যত সভ্য তার ক্ষিদে তত বেশি ।
লেখক : আবু হাসান. পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ; সহ সম্পাদক, দৈনিক দক্ষিনের মশাল।