নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোমরায় পার্কিং ইয়ার্ড থেকে বোল্ডার পাথর চুরির অভিযোগ উঠেছে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। এজহার দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী আমদানি কারক শরিফুল এন্ড ব্রাদার্স।
এজহারে আসামি করা হয়েছে, বৈচনা গ্রামের মৃত আবু সিদ্দিকের ছেলে আজিজ গাজী(চোর আজিজ), ভোমরা এলাকার আহম্মদ আলী, শহরের পলাশপোল এলাকার মল্লিক আবদুল আজিজ ও ভোমরা স্থল বন্দরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (এক সময়ের সিএন্ডএফ কর্মচারী) অহিদুল ইসলাম।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শহরের মৃত জিন্নাত আলীর ছেলে আমিনুল ইসলাম শরিফুল এন্ড ব্রাদার্স নামে ভোমরা বন্দরে দীর্ঘদিন যাবৎ পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ব্যবসা করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে ৪ হাজার টন বোল্ডার পাথর আমদানি করে অহিদুল ইসলামের পার্কিং ইয়ার্ডে (ভাড়া চুক্তিতে) রাখে।
ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজে ব্যবহারের জন্য ওই ৪ হাজার টন পাথরের মধ্যে ৩ হাজার টন পাথর সরবরাহ করা হয়েছে। বাকী ১ হাজার টন পাথর উক্ত স্থানে ছিলো। কিন্তু এবছরের গত ২০ আগস্ট ২০ সেপ্টেম্বর তারিখের মধ্যে উক্ত ১ হাজার টন পাথরের মধ্যে প্রায় ৫০০ টন পাথর (আনুমানিক মূল্য ১৬লক্ষ টাকা) অহিদুল ইসলামের নির্দেশে উল্লেখিত আব্দুল আজিজ, আহম্মদ আলী ও মল্লিক আব্দুল আজিজ গোপনে চুরি করে।
চোরাই পাথরগুলো ৩টি ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪৮৮২, ঝিনাইদহ-ট-১১-১৫৪২ ও যশোর-ট-১১-৪৬৮৩) লোড করে নিয়ে যাওয়ার সময় গত ২১ সেপ্টেম্বর’ ১৮তারিখে উক্ত গুলোর মধ্যে একটি ট্রাক যার নং যশোর-ট-১১-৪৬৮৩ সহ চালককে আটক করে খুলনার হরিনটানা থানার পুলিশ।
খবর পেয়ে শরিফুল এন্ড ব্রাদার্সের দায়িত্ব প্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম অহিদুল ইসলামের ইয়ার্ড পার্কিংয়ের খোজ নিতে গেলে তারা রফিকুল ইসলামকে পাথরের খোঁজ তো দেয়ই না বরং তাকে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেয়।
এখনো পর্যন্ত ওই চোরাই পাথরসহ ট্রাকটি (যশোর-ট-১১-৪৬৮৩) হরিনটানা থানায় আটক আছে। এঘটনায় উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে শরিফুল এন্ড ব্রাদার্সের পক্ষে রফিকুল ইসলাম সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
এদিকে ঘটনার এক দিন পরে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে একটি পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানাগেছে।
এঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি অপারেশন সেকেন্দার আলী জানান, ‘পাথর চুরির ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। আবার অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা পাবে বলে আরেক একটি অভিযোগ করেছেন। যেহেতু একই ঘটনায় দুটি অভিযোগ, সেক্ষেত্রে আমরা মিমাংসা করার চেষ্টা করছি। মিমাংসা না হলে দুটি মামলাই রেকর্ড করা হবে।’
এদিকে ভোমরা স্থলবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত অহিদুল ইসলাম সোনালী ট্রান্সপোর্টের একজন কর্মচারী হিসাবে যোগদান করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে লক্ষ-লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ও অবৈধ পন্থায় বর্তমানে কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
আমদানিকারক শরিফুল এন্ড ব্রার্দাসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কাজের সুবিধার্থে ফারহাদ ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটার অহিদুল ইসলামের কাছে শরিফুল এন্ড ব্রার্দাসের ফাঁকা প্যাড দেওয়া আছে। পার্কিং থেকে বিল অব এন্ট্রি কাগজ ছাড়া মালামাল বের হতে পারে না। তিনি যদি পাথর চুরির বিষয়ে অবগত না থাকবেন তাহলে কিভাবে তার পার্র্কিং ইয়ার্ড থেকে পাথরগুলো খুলনা পর্যন্ত পৌছালো।
অন্যদিকে ভোমরা স্থল বন্দরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, ভোমরা বন্দরের আজিজ চোরসহ একাধিক চোরের সিন্ডিকেট রয়েছে। যাদেরকে পরোক্ষভাবে কতিপয় সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা মদদ দিয়ে থাকেন। যে কারণে বন্দরের বিজিবি চেকপোস্টটি তুলে দিয়েছেন। বিজিবি চেকপোস্ট থাকাকালে এধরণের চুরির ঘটনা ঘটাতে গেলে তাদের অনেক সমস্যা পড়তে হত। কিন্তু চেকপোস্টটি উঠে যাওয়ায় ওই চোর চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বন্দরে আবারো বিজিবি চেকপোস্ট বসানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এঘটনায় অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমার কোন বিষয় না। এটা আজিজ ও খুলনার আমদানি কারকের ব্যাপার। আজিজ ওই আমদানি কারকের কাছে টাকা পাবেন। আপনারা উভয় পক্ষকে এক জায়গায় বসার ব্যবস্থা করে দেন বিষয়টি মিমাংসা হয়ে যাবে।’
খুলনা পাথরসহ গাড়ী আটকের বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে জানান।