Site icon Daily Dakshinermashal

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন নুরুল হুদা

Spread the love

এসবিনিউজ ডেস্ক : ইসি নিয়োগের সার্চ কমিটির তালিকা থেকে সোমবারই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পরবর্তী সিইসি হিসেবে সাবেক সচিব নূরুল হুদাকে নিয়োগ দেন। সিইসির সঙ্গে চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগও দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তারা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীকে।

নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মাহবুব তালুকদারের নাম প্রস্তাব করেছে বিএনপি। সার্চ কমিটির সুপারিশকৃত ১০ জনের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদের নামও বিএনপি প্রস্তাব করেছিল। তবে তার নাম বিবেচনায় নেয়া হয়নি। আর আওয়ামী লীগ মনোনীতদের মধ্যে কবিতা খানমের নাম রাষ্ট্রপতি নিয়েছেন।  আর তাদের দেয়া পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আব্দুল মান্নানের নাম সার্চ কমিটি সুপারিশ করলেও রাষ্ট্রপতি তা নেননি।

এক যুগ আগে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া নূরুল হুদা পটুয়াখালীর বাউফলের বাসিন্দা। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নিয়ে পটুয়াখালী জেলা পাক হানাদার মুক্ত করতে ভূমিকা ছিল তার।

১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া নূরুল হুদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিভাগে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের আবাসিক এ ছাত্র ১৯৭২-৭৩ সালে হল ছাত্র সংসদে সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই বরিশাল অঞ্চলে মেজর জলিলের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন নূরুল হুদা। যুদ্ধের পরে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান নূরুল হুদা। পরে জাসদের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল তার।

নূরুল হুদা ১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারি কর্মকমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরের ৩০ জুলাই প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন।

চাকরিজীবনে ফরিদপুর ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ছাড়াও কিছু মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থাকার সময়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেরুয়ারি এবং ১২ জুলাই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন নূরুল হুদা।

এছাড়া তিনি এরশাদ আমলে ১৯৮৫ সালে উপজেলা নির্বাচন এবং ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালের ২৪ জুলাই বিএনপি ক্ষমতায় এসে কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে নূরুল হুদাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। সর্বোচ্চ আদালত পরে বিএনপি সরকারের ওই আদেশ বেআইনি ঘোষণা করে। পরে তিনি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন এবং সব ধরনের আর্থিক সুযোগ সুবিধা লাভ করেন।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন নূরুল হুদা।

সরকারি চাকরি শেষে ২০১০ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে, ছিলেন ৫ বছর। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

স্ত্রী হুসনে আরার সঙ্গে নূরুল হুদার সংসারে তিন ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে প্রকৌশলী, কানাডায় রয়েছেন। মেজ মেয়ে বুয়েট থেকে পাস করে পিএইচডি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে থাকেন। ছোট মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠ চুকিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্যে কানাডায় রয়েছেন।

উল্লেখ্য, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে দুইজন এবং চার নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য আটজনের নাম সুপারিশ করে।

বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে  সুপারিশসহ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব বাংলাদেশ মাসুদ আহমেদ, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শিরিণ আখতার।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১০ জনের নাম পেশ করার জন্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটিকে ধন্যবাদ জানান। গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেন।

Exit mobile version