Site icon Daily Dakshinermashal

কৃত্রিম কিডনি সংযোজন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে : বিশেষজ্ঞ

Spread the love

॥ অনুপ খাস্তগীর ॥

এসবিনিউজ ডেস্ক : কিডনিজনিত অসুস্থতা বিশ্বের অন্যতম যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্যগত সমস্যা। আর এই চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী একজন মার্কিন জৈব-প্রকৌশলীর নেতৃত্বে কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপন গবেষণা বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের লাখ লাখ রোগী সাশ্রয়ী মূল্যে কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ পাবেন।

ভারতের চেন্নাইতে আন্তর্জাতিক কিডনি সম্মেলনের সাইডলাইনে বাসস-এর সঙ্গে কথা বলেন ৪৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই মার্কিন বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার ড. শুভ রায়। তিনি বলেন, বৃহদাকার প্রাণীর দেহে কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপনে ‘খুবই ইতিবাচক’ ফলাফল পাওয়ার পর আগামী তিন বছরে মানবদেহে কৃত্রিম কিডনির পরীক্ষামূলক প্রতিস্থাপন তথা ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-২০২০ সালে সম্পন্ন হবে।

‘কিডনি অকার্যকর হওয়া বা কিডনিজনিত রোগের শেষ পরিণতি (ইএসআরডি)-র স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গত ১৫ বছর ধরে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে তার গবেষক দলের একনিষ্ঠ গবেষণা বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে’- তিনি জানান।

বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভ্রমণরত শুভ রায় বলেন, ‘কিডনিজনিত রোগে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের মানসম্মত বিকল্প হচ্ছে কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপন করা।’

তিনি জানান, কফির কাপের আকারের এই যন্ত্রটি মানবদেহের ভেতরে স্থাপন করা হবেÑযা সংশ্লিষ্ট রোগীর রক্ত সঞ্চালক অঙ্গ ও ক্ষতিগ্রস্ত কিডনির কাছেই সংযুক্ত থাকবে।

কৃত্রিম কিডনির সাশ্রয়ী মূল্য সম্পর্কে শুভ রায় বলেন, এই জৈব-যান্ত্রিক ডিভাইসটির মূল্য কিডনি প্রতিস্থাপন বা ডায়ালাইসিসের খরচের চেয়ে যথেষ্ট কম হবে।

তিনি বলেন, ‘এই কৃত্রিম কিডনি হরমোন তৈরি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও রক্ত পরিশোধনসহ অধিকাংশ জৈবিক কাজ সম্পন্ন করবে।’

শুভ রায় বলেন, বৃক্কজনিত জটিলতায় ভুগছেন এমন রোগীদের কৃত্রিম কিডনী ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন থেকে স্থায়ীভাবে নিষ্কৃতি দেবে।

তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন এমন রোগীর তুলনায় কিডনি দানকারীর সংখ্যা খুবই সীমিত এবং এই প্রক্রিয়াটি আইনগতভাবেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রেক্ষিতে জটিল এবং খরচও খুব বেশী।’

তিনি আরো বলেন, ‘কৃত্রিম কিডনি দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই একটি জৈব যন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হবে এবং সে লক্ষেই আমাদের প্রচেষ্টা এগিয়ে চলছে। চলমান পরীক্ষা ও গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে, কোন রকম নিষ্ক্রিয়তা ছাড়াই এই ডিভাইসটি বহু বছর চলা সম্ভব।’

এই কৃত্রিম ‘ডিভাইস’ বা অঙ্গটি কোন কারণে অকার্যকর হয়ে পড়লেও সামান্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর ছাকনি বা কোষ প্রতিস্থাপন করা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ‘বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড থেরাপিউটিক সায়েন্সেস’ বিভাগের (ইউসিএসএফ) অধ্যাপক শুভ রায় বর্তমানে ‘মাল্টি-ইনস্টিটিউশনাল কোলাবরেটিভ কিডনি প্রজেক্ট’-এর টেকনিক্যাল ডাইরেক্টও হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে, ভ্যান্ডারবিল্ট-এর মেডিসিন বিভাগের ড. উইলিয়াম ফিসেল এই প্রকল্পের মেডিকেল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন।

চট্টগ্রামের চিকিৎসক ডা. অশোক রায় ও রতœা দত্তের দু’ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে শুভ রায় বড়। তার জন্ম ১৯৬৯ সালে ঢাকায়। তার শিক্ষা জীবনের সূচনা ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর একটি বিদ্যালয়ে। পরে পিতার চাকরির সূত্রে উগান্ডায় চলে যান এবং সেখানে পড়াশোনা করেন।

উগান্ডার তৎকালিন প্রেসিডেন্ট ইদি আমিনের অনুরোধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে দেশে বাংলাদেশের যে মেডিকেল টিম পাঠিয়েছিলেন ড. শুভ রায়ের পিতা সেই টিমের সদস্য ছিলেন।

পরবর্তীতে শুভ রায় যুক্তরাষ্ট্রের নরদার্ন ওহিও স্টেটে চলে যান এবং সেখান থেকে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ¯œাতোকোত্তর ডিগ্রী করেন।

ড. শুভ রায় বলেন, ‘যদি আমাদের কোন অনাকাঙ্খিত সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয় তাহলে আমরা আশা করি ২০১৭ সাল শেষ হওয়ার আগেই একটি ডিভাইস ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত হবে এবং ২০২০ সাল নাগাদ তা সম্পন্ন হবে।’

তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় তার দল ওই ডিভাইসটির উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সম্ভাবনাময় নির্মাতাদের সাথেও কাজ করবে।

তিনি বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো শেষ হলে শিগগিরই ওই ডিভাইসটি রোগীদের জন্য সহজলভ্য হবে।’ বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে প্রতিবছরই মানুষের কিডনি অকেজো হওয়ার ঘটনা বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি, কিডনি অকেজো হওয়ার সাথে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৬ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কিডনি অকেজো হওয়ায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং এ জন্য বছরে ব্যয় হয় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ওই দেশের বাৎসরিক চিকিৎসা ব্যয়ের মোট সাত শতাংশ।

বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, কিডনী সংশ্লিষ্ট রোগের প্রকোপ বেশীÑবিশ্বে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোন না কোন ধরনের কিডনি সংশ্লিষ্ট জটিলতায় ভুগছেন। এক দশক আগে এই সংখ্যা ছিল এক কোটি।

দেশে প্রতি সাতজনে একজন কিডনি রোগে ভুগছেন এবং প্রতিবছর ৪০ হাজার মানুষ দীর্ঘমেয়াদে কিডনি অকেজো হওয়ায় মারা যান এবং এই রোগীদের অংধিকাংশই চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারেন না।

 

Exit mobile version